পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৮
ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ।

বড়। কিন্তু এতাদৃশ প্রকাণ্ড গগনস্পর্শী চূড়ার তুলনায়, মন্দিরের দ্বারটি বড়ই নীচু, এমন কি গুপ্তপথ বলিয়া ও মনে হইতে পারে; মনে হয়, উহা যেন সুরঙ্গপথের দ্বার—রহস্যরাজ্যের প্রবেশপথ।

 জীবনের মধ্যে এই সর্ব্বপ্রথম ব্রাহ্মণদিগের একটি মন্দির দেখিয়া আমার মনে হইল, আমি এমন একটা কিছু দেখিলাম, যাহা পৌত্তলিকতার বিষাদ-অন্ধকারে আচ্ছন্ন;—ভীষণ বৈরভাবাপন্ন লোকের দ্বারা পূর্ণ। আমি এইরূপ. দেখিব বলিয়া প্রত্যাশা করি নাই; আর ইহাও ভাবি নাই, মন্দিরে আমার প্রবেশনিষেধ হইবে। আমি কতকটা আশা করিয়াছিলাম, ভারতবর্ষে গিয়া, মহাপূৰ্বপুরুষগণ-অবলম্বিত ধর্ম্মের অন্তস্তলে কিঞ্চিৎ জ্ঞানালোক প্রাপ্ত হইব। কিন্তু এখন আমার সেই চিরপোষিত আশা অতীব শূন্যগর্ভ ও নিতান্ত “ছেলেমানষি” বলিয়া মনে হইতেছে।

 আহা! খৃষ্টধর্মের মধ্যে কেমন একটি মন-ভুলানিয়া মধুময় শান্তির ভাব বিরাজিত-সেই ধর্ম্ম, যাহার দ্বার সকলেরই নিকট অবারিত এবং যাহা শ্রদ্ধাহীন ব্যক্তিদিগেরও হিতসাধনে সতত নিযুক্ত।...

 এখন আমাকে সকলে এইরূপ আশ্বাস দিতেছে, ভারতবর্ষের অন্য প্রদেশে, দেবালয়ের মধ্যে এতটা দারুণ কঠোরতা লক্ষিত হইবে না, এমন কি-সেখানকার দেবালয়ে হয় তো আমি প্রবেশ করিতেও অনুমতি পাইব। যাহা হউক, এইবার এইখান হইতে সরিয়া পড়াই ভাল-বেশিক্ষণ থাকাটা সুবুদ্ধির কাজ নহে। কিন্তু যদি ইচ্ছা করি, গাড়িতে থাকিয়া আস্তে-আস্তে এই বৃহৎ মন্দিরের চারিদিক প্রদক্ষিণ করিতে পারি—তাহাতে কোন বাধা নাই।

 মন্দিরের ঘেরটা সমচতুষ্কোণ,—এত বৃহৎ যে, ইহার মধ্যে একটা নগরের সমাবেশ হইতে পারে। ইহার চতুঃসীমার মধ্যস্থল হইতে একটি প্রকাণ্ড স্তূপ সমুখিত—উহার নিম্নদেশে একটি ‘দ্বার ফুটানো আছে। এই সকল মূক প্রাচীর—যাহার ধার দিয়া আমরা নিস্তব্ধ