পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৫০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৪৬
ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ।

হইয়াছে। এই সময়ে আর সমস্ত কার্য্যই স্থগিত, এমন কি, চিতাতেও এখন আগুন ধরান হইতেছে না—শবেরা অপেক্ষা করিয়া রহিয়াছে।

 সকলেরই মুখে কি-এক অপূর্ব্ব অন্যমনস্কভাব; মুখাবয়বসকল যেন জমাটবদ্ধ, চোখ যেন কিছুই আর দেখিতেছে না! যুবাপুরুষেরা ধ্যানে মগ্ন, হস্তদ্বয় মুখের উপর সংলগ্ন—দুইটি জ্বলন্ত চোখের তারা ছাড়া মুখের আর কিছুই দেখা যাইতেছে না—সে চোখের দৃষ্টি সংসারের পরপারে; জপমালায় আচ্ছাদিত সন্ন্যাসিগণ—যাহাদের আত্মা ক্ষণকালের জন্য হৃতচৈতন্য জড়শরীরকে ছাড়িয়া গিয়াছে; ধূসর ভস্মচুর্ণে সর্বাঙ্গ আচ্ছাদিত বৃদ্ধগণ—সকলেরই সেই এক ভাব।…

 একজন জলের ধারে বসিয়া পূজা-অর্চ্চনা করিতেছে; শাদা-শাদা চোখ; শাক্যসিংহের মূর্ত্তির মত পদ্মাসনবদ্ধ হইয়া মৃগচর্ম্মের উপর আসান; এই আসনটি সন্ন্যাসীদেরই বিশেষ আসন। দুই পা পরস্পরের উপর আড়াআড়িভাবে ন্যস্ত, জানু মাটি ছুঁইয়া রহিয়াছে; এবং বামহস্ত—দীর্ঘ অস্থিসার বামহস্ত—দক্ষিণপদ ধরিয়া রহিয়াছে। ইনি একজন বৃদ্ধ। ইহার পরিচ্ছদ গায়ে আঁটিয়া ধরিয়াছে—জল গড়াইয়া পড়িতেছে। পরিচ্ছদের রং ফিঁকা গোলাপী নারাঙ্গী—যেন উষার মেঘরাশি।

 ইনি নিশ্চল হইয়া পূজা করিতেছেন; ইহার ললাটে শৈবচিহ্ন অঙ্কিত; চোখের তারা কাচের মত; ইহার সীসা-কালিম মুখ জ্বলন্ত সূর্য্যের দিকে ফেরান রহিয়াছে—জলন্তসূর্য্যের কিরণে মুখ ঝিক্‌মিক্‌ করিতেছে। মুখে একপ্রকার অপরিসীম আনন্দের ভাব। একজন নগ্নকায় পালোয়ানিধরণের বলিষ্ঠযুবক, তাঁহার রক্ষিপদে ব্রতী হইয়া, মধ্যে-মধ্যে এক-একঅঞ্জলি গঙ্গাজল লইয়া সেই জলে তাঁহার অরুণবর্ণের পরিচ্ছদকে প্লাবিত করিতেছে; এবং সেই বৃদ্ধসন্ন্যাসীর সম্মুখে মৃগচর্ম্মের উপর যে সকল পুষ্পমাল্য রহিয়াছে, সেই সব পুষ্পমাল্যের মলক্ষালন করিবার জন্য তাহার উপয় জল ছিটাইয়া দিতেছে—মৃগচর্ম্মসংলগ্ন মৃগের মুস্তক ও শৃঙ্গ জলে