পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৬২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

বলবার কি আছে। পতঞ্জলি দর্শন মনে পড়লো, সাংখ্য মনে পড়লো, বেদান্ত মনে পড়লো-কিন্তু এই গ্রামা কবিরাজের কাছে—না। অচল। সে সব অচল। তাঁর হাসিও পেল বিলক্ষণ। আদি সংবাদ!

 হঠাৎ রামকানাই বললেন-আমার কিন্তু একটা মনে হয়—অনেকদিন বসে বসে ভেবেচি, বোঝলেন? ও ব্রহ্মা বলুন, বিষ্ণু বলুন, মহেশ্বর বলুন—সবই এক। একে তিন, তিনি এক। তা ছাড়া এ সবই তিনি। কি বলেন?

 ভবানী বাঁড়ুয্যের চোখের সামনে যদি এই মুহূর্তে রামকানাই কবিরাজ চতুর্ভুজ বিষ্ণুতে রূপান্তরিত হয়ে পরে দুই হাতে বরাভয় মুদ্রা রচনা করে বলতেন—বৎস, বরং, বৃণু ইহাগতোহস্মি। তা হহলেও তিনি এতখানি বিস্মিত হতেন না। এই সামান্য গ্রাম্য কবিরাজের মুখে অতি সরল সহজ ভাষায় অদ্বৈত ব্রহ্মবাদের কল্যাণময়ী বাণী উচ্চারিত ফেলে। এই সংস্কার, অশিক্ষিত, মোহান্ধ, ঈর্ষাদ্বেষসঙ্কুল, অন্ধকার পাড়াগেঁয়ে এঁঁদও খড়ের ঘরে।

 ভবানী বাঁড়ুয্যে কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে রইলেন। তিনি মানুষ চেনেন, অনেক দেখেছেন, অনেক বেড়িয়েচেন। মুখ তুলে বললেন-কবিরাজশাই, ঠিক বলেচেন। আপনাকে আমি কি বোঝাবো? আপনি জ্ঞানী পুরুষ।

 হ্যাঁ এইবাব ধরেচেন ঠিক জামাইবাবু! জ্ঞানী লোক একডা খুঁজে বার করেছেন—

 তিলুও খুব অবাক হয়েছিল। সেও স্বামীর কাছে অনেক কিছু পড়েছে, অনেক কিছু শিখেচে, বেদান্তের মোটা কথা জানে। এভাবে সেকথা রামকানাই কবিরাজ, বলবে, তা সে ভাবেনি। সে এগিয়ে এসে বললে আমি অনেক কথা শুনেছি আপনার ব্যাপারে যথেষ্ট অত্যাচার আপনার ওপর বড়দা করেছেন, নীলকুঠির লোকেরা করেছে—আপনি মিথ্যে সাক্ষী দিতে চাননি বলে টাকা খেয়ে সায়েবদের পক্ষে। অনেক কষ্ট পেয়েছেন তবু কেউ আপনাকে দিয়ে মিথ্যে বলাতি পারেনি রামু সর্দারের খুনের মামলায়। আমি সব জানি। কতদিন ভাবতাম আপনাকে দেখবে। আপনি আজ আমাদের ঘরে আসবেন, আপনারে খাওয়াবো-তা ভাবিনি। আপনার মুখির কথা শুনে বুঝলাম, আপনি সত্যি

১৫৮