পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৮১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 ভবানী বাঁড়ুয্যে কথা শেষ করতে না দিয়েই তাড়াতাড়ি হাত জোড় করে বললেন- না, মাপ করুন বিধুদিদি, আমি একা পেরে উঠবো না-বয়েস হয়েছে-

 এই কথাতে একটা হাসির বন্যা এসে গেল বৌ-ঝিদের মধ্যে। কারো চাপা হাসি, কেউ খিলখিল করে হেসে উঠলো, কেউ মুখ ফিরিয়ে নিয়ে ওদিকে, কেউ ঘোমটার আড়ালে খুক্ খুক্ করে হাসতে লাগলো-হাসির সেই প্লাবনের মধ্যে ভাদ্র অপরাহ্ণে নদীর ধারের কদম ডালে রাঙা রোদ আর ইছামতীর ওপারে কাশফুলের দুলুনি। কোথাও দূরে ঘুঘুর ডাক। নিস্তারিণীর কোলে খোকার অর্থহীন বকুনি। সব মিলিয়ে তেরের পালুনি আজ ভালো লাগলো নিস্তারিণীর। ঠাকুরজামাই কি আমুদে মানুষটি! আর বয়েস হোলেও এখনো চেহারা কি চমৎকার।

 নতুন ম্যাজিস্ট্রেট সাহেব নীলকুঠি পরিদর্শন করতে এসেছিলেন। মিঃ তঙ্কিন্‌সন্ বদলি হয়ে যাওয়ার পরে অনেক দিন কোনো ম্যাজিষ্ট্রেট নীলকুঠিতে পদার্পণ করেন নি। কাজেই অভ্যর্থনার আড়ম্বর একটু ভালো রকমই হোলো। খুব খানাপিনা, নাচ ইত্যাদি হয়ে গেল। যাবার সময় নতুন ম্যাজিস্ট্রেট কোলম্যান্ সাহেব বড়সাহেবকে নিভৃতে কয়েকটি সদুপদেশ দিয়ে গেলেন।

 —Do you read native newspapers? You do? Hard times are ahead, Mr Shipton. Stuff some wisdom into the brains of your men, You understand? hope you will not mind my saying so?

 —Explain that to me.

 —I will, presently.

 আসল কথা ক্রমশঃ দিন খারাপ হচ্চে। দেশী কাগজওয়ালারা খুব হৈ-চৈ আরম্ভ করেছে, হিন্দু পেট্রিয়ট কাগজে হরিশ মুখুয্যে গরম গরম প্রবন্ধ লিখচে, রামগোপাল ঘোষ নীলকরদের বিরুদ্ধে উত্তেজনাপূর্ণ বক্তৃতা করচে, নেটিভরা মানুষ হয়ে উঠলো, সে দিন আর নেই, একটু সাবধানে সব কাজ করে যাও।

১৭৭

 ইছামতী-১২