রামকানাই দুঃখিত সুরে বললেন—না মা, ওসব কথা বলতি নেই। আমি তুচ্ছ লোক। আচ্ছা একটু ওষুধ তোমারে দিই। আদা আর মধু দিয়ি মেড়ে খাবা।
—আচ্ছা, বাবা—
—কি?
—সব লোক আপনার মত হয় না কেন? লোকে এত দুষ্টু বদমাইশ হয় কেন?
আমিও ওই দলের। আমি কি করে দলছাড়া হলাম? এ গাঁয়ে একজন ভালো লোক আছে, দেওয়ানজির জামাই ভবানী বাঁড়ুয্যে। মিথ্যা কথা বলে না, গরীবের উপকার করে, লক্ষ্মীর সংসার, ভগবানের কথা নিয়ে আছে।
—আমি দেখিচি দূর থেকি। কাছে যেতি সাহসে কুলোয় না -সত্যি কথা বলচি আপনার কাছে। আমাদের জন্মো মিথ্যে গেল। জানেন তো সবি জ্যাঠামশাই—
—তাঁকে ডাকো। তাঁর কৃপা হোলি সবই হয়। তুমি তো তুমি, কত বড় বড় পাপী তরে গেল।
—জ্যাঠামশাই এক এক সময়ে মনে বড্ড খেদ হয়। ইচ্ছে হয় সব ছেড়েছুড়ে বেরিয়ে যাই—মার জন্যি পারিনে। মা-ই আমাকে নষ্ট করলে। মা আজ মরে গেলি আমি একদিকে গিয়ে বেরোতাম, সত্যি বলচি, এক এক সময় হয় এমনি মনটা জ্যাঠামশাই—
রামকানাই চুপ করে রইলেন। তাঁর মন সায় দিল না এসময়ে কোনো কথা বলতে।
গয়া বললে—কলা নেবেন?
—দিয়ে যাও। ওষুধটা দিয়ে দিই মা, দাঁড়াও। মধু আছে তো? না থাকে আমার কাছে আছে, দিচ্ছি—
গয়া প্রণাম করে চলে গেল ওষুধ নিয়ে। পথে যেতে যেতে প্রসন্ন চক্কত্তির সঙ্গে হঠাৎ দেখা। গয়ার আসবার পথে সে একটা গাছের তলায় দাঁড়িয়ে আছে।