পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৪৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 —আঃ, কি?

 —ও সায়েব অমন করচে কেন?

 —সবাইকে নমস্কার করচে।

 —ও কে বাবা?

 —ওই সেই ছোটলাট। কি নাম বলে দিয়েচি?

 —মনে নেই বাবা।

 —মনে থাকে না কেন খোকা? ভারি অন্যায়। সার—

 টুল খানিকটা ভেবে নিয়ে বললে—উলিয়াম গ্রে—

 —উইলিয়াম গ্রে—চলো—এবার বাড়ি যাই—

 —আর একটু দেখি বাবা—

 —আর কি দেখবে? সব তো চলে গেল।

 —কোথায় গেল বাবা?

 —ইছামতী বেয়ে চুণাতে গিয়ে পড়বে, সেখান থেকে গঙ্গায় পড়বে। তারপর কলকাতায় ফিরবে।

 —টুলু বাবার কাঁধ থেকে নেমে গুটগুট ক’রে রাস্তা দিয়ে হেঁটে বাড়ি চললো। সামনে পেছনে গ্রাম্যলোকের ভিড়। সকলেই কথা বলতে বলতে যাচ্চে। টুলু এমন জিনিস তার ক্ষুদ্র চার বছরের জীবনে আর দেখে নি। সে একেবারে অবাক হয়ে গিয়েছে আজকার ব্যাপার দেখে। কি বড় কলের নৌকোখানা! কি জলের আছড়ানি ডাঙার ওপরে, নৌকোখানা যখন চলে গেল, কি ধোঁয়া! কেমন সব সাদা সাদা সায়েব!

 তিলু বললে—কি দেখলি রে খোকা?

 খোকা তখন মার কাছে বর্ণনা করতে বসলো। দু’হাত নেড়ে কত ভাবে সেই আশ্চর্য ঘটনাটি মাকে বোঝাতে চেষ্টা করলে।

 নিলু বললে—রাখ্‌,—এখন চল আগে গিয়ে খেয়ে নিবি—আয়—


 বিলু নেই। গত আষাঢ় মাসের এক বৃষ্টিধারামুখর বাদল রাত্রে স্বামীর কোলে

২৪১