পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৬৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 গয়া বললে-কি খুড়োমশাই, খবর কি?

 —দেখাই তো আর পাই নে। ডুমুরের ফুল হয়ে গিয়েচ।

 গয়ামেমা হেসে প্রসন্ন আমীনের খুব কাছে এসে দাড়িয়ে বললে - কেন, এমন ক’রে দাড়িয়ে আছেন এখেনে দুপুরের রদ্দরি?

 —তোমার জন্যি।

 —যান, আবার সব বাজে কথা খুড়োমশায়ের।

 —পাঁচ দিন দেখি নি আজ।

 —এ পোড়ারমুখ আর নেই বা দেখলেন।

 —তার মানে?

 —আপনাদের কোন্ কাজে আর লাগবো বলুন।

 —আচ্ছা গয়া-

 —কি?

 বলেই গয়া মুখে আঁচল দিয়ে খিল খিল ক’রে হেসে চলে যেতে উদ্যত হোলো।

 প্রসন্ন ব্যস্ত হয়ে বললে-শোনো শোনো, চললে যে? কথা আছে।

 গয়া যেতে যেতে থেমে গেল, পেছন ফিৱে প্রসন্ন চক্কত্তির দিকে চেয়ে বললে—আপনার কথা খুড়োমশাই শুধু হেনো আর তেনো। শুধু তোমাকে দেখতি ভালো লাগে আর তোমার জন্যি দাড়িয়ে আছি আর তোমার কথা ভাবছি-এই সব বাজে কথা। যত বলি, খুড়োমশাই বলে ডাকি, আমারে আমন বলতি আছে। আপনার? অমন বলবেন না। ততই মুখির বাঁধন দিন দিন আলগা হচ্চে যেন!

 প্রসন্ন চক্কত্তি হেসে বললে-কোথায় দেখলে আলগা? কি বলিচি আমি?

 —শুধু তোমারে দেখতি ভালো লাগে, তোমাকে কতকাল দেখি নি, তোমারে না দেখলি থাকতি পারি নে-

 —মিথ্যে কথা একটাও না।

 —যান বাসায় যান দিনি। এ দুপুরবেলা রদ্দরি দাঁড়িয়ে থাকবেন না।

২৬০