পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৯৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

বলুন। মেজদি ভাগ্যিমানি ছিল—একমাথা সিঁদুর আর কস্তাপেড়ে শাড়ি পরে চলে গিয়েছে, দেখতি দেখতি কতদিন হয়ে গেল!

 তিলু বললে—ওঁর খাবার সময় তুই বুঝি আর কথা খুঁজে পেলি নে? যত বয়েস হচ্ছে, তত ধাড়ি ধিঙ্গি হচ্চেন দিন দিন।

 বিলুর মৃত্যু যদিও আজ চার-পাঁচ বছর হোলো হয়েছে, তিলু জানে স্বামী এখনো তার কথায় বড় অন্যমনস্ক হয়ে যান। দরকার কি খাবার সময় সে কথা তুলবার!

 নিস্তারিণী ঘোমটা দিয়ে এসে এই সময় উঠোন থেকে ব্যস্তসুরে বললে—ও দিদি, বট্ ঠাকুরের খাওয়া হয়ে গিয়েছে?

 —কেন রে, কি ওতে?

 —আমড়ার টক আর কচুশাকের ঘণ্ট। উনি ভালোবাসেন বলেছিলেন, তাই বলি বান্না হোলো নিয়ে যাই। খাওয়া হয়ে গিয়েছে-

 —ভয় নেই। খেতে বসেচেন, দিয়ে যা-

 সলজ্জ সুরে নিস্তারিণী বললে-তুমি দাও দিদি। আমার লজ্জা-

 —ইস! ওঁর মেয়ের বয়স, উনি আবার লজ্জা-যা দিয়ে আয়-

 —না দিদি।

 —হ্যাঁ-

 নিস্তারিণী জড়িতচরণে তরকারির বাটি নামিয়ে রাখলে এসে ভবানী বাঁড়ুয্যের থালার পাশে। নিজে কোনো কথা বললে না। কিন্তু ওর চোখমুখ আগ্রহে ও উৎসাহে এবং কৌতুহলে উজ্জ্বল। ভবানী বাটি থেকে তরকারি তুলে চেখে দেখে বললেন- চমৎকার কচুর শাক। কার হাতের রান্না বৌমা?

 নিস্তারিণী এ গ্রামের মধ্যে এক অদ্ভুত ধরনের বৌ। সে একা সদর রাস্তা দিয়ে হেঁটে এ-বাড়ি ও বাড়ি যায়, অনেকের সঙ্গে কথা কয়, অনেক দুঃসাহসের কাজ করে- যেমন আজ এই দুপুরে রাস্তা দিয়ে হেঁটে তরকারি আনা ওপাড়া থেকে। এ ধরনের বৌ এ গ্রামে কেউ নেই। লোকে অনেক কানাকানি করে, আঙুল দিয়ে দেখায়, কিন্তু নিস্তারিণী খুব অল্প বয়সের বৌ নয়, আর বেশ শক্ত,

২৮৯