পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩০৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

নীলমণি সমাদ্দারের বাড়ি।

 নীলমণির সংসার এই রকমেই চলে।


 গয়ামেম সকালে সামনের উঠোনে ঘুঁটে দিচ্ছিল, এমন সময়ে দূরে প্রসন্ন আমীনকে আসতে দেখে গোবরের ঝুড়ি ফেলে কাপড় ঠিকঠাক করে নিয়ে উঠে দাড়ালো। প্রসন্ন চক্কত্তি কাছে এসে বললে, কি হচ্চে? বলে দিইচি না, এসব কোরো না গয়া। আমার দেখলি কষ্ট হয়। রাজরাণী কিনা আজ ঘুঁটেকুড়ুনি।

 গয়া হেসে বললে-যা চিরডা কাল করতি হবে, তা যত সত্বর আরম্ভ হয় তই ভালো।

 —আহা! আজ তোমার মাও যদি থাকতো বেঁচে। হঠাৎ মারা গেল কিনা। মরবার বয়েস আজও তা'বলে হই নি ওর।

 —সবই অদেষ্ট খুড়োমশাই। তা নলি-

 গয়ামেম বিষন্ন মুখে মাটির দিকে চেয়ে রইল।

 প্রসন্ন চক্কত্তি ঘরটার দিকে চেয়ে দেখলে। দুখানা খড়ের ঘর, একখানাতে সাবেক আমলে রান্না হতো-হুঁশিয়ার বরদা বাগ্‌দিনী মেয়ের কুঠিতে খুব পসার-প্রতিপত্তির অবসরে রান্নাঘরখানাকে বড় করে দাঁড় করায়-কাঁঠালকাঠের দরজা, চৌকাঠ, জানালা বসিয়ে। এইখানাতেই এখন গয়ামেম বাস করে মনে হলো, কারণ জানালা দিয়ে তক্তপোশের ওপর বিছানা দেখা যাচ্ছে। কিন্তু অন্য ঘরখানার অবস্থা খুব খারাপ, চালের খড় উড়ে গিয়েছে, ইদুরে মাটি তুলে ডাঁই করেচে দাওয়ায়, গোবর দিয়ে নিকোনো হয় নি। দেওয়ালে ফাটল ধরেচে।

 প্রশন্ন চক্কত্তি বললে-ঘরখানার এ অবস্থা কি করে হোলো?

 —কি অবস্থা?

 —পড়ে যায়-যায় হয়েছে!

 —গেল, গেল। একা নোক আমি, ক'খানা ঘরে থাকবো?

৩০৪