—ঘুমুলি ভাই?
—না, গরমে ঘুম আসচে না।
নীরি খেজুরের চাটাই পেতে ওর পাশেই শুলো। বললে—কি বা খাওয়ালাম তোরে! কখনো আগে আসতিস নে—
এটাও বোধহয় ঠেস দিয়ে কথা নীরির। সময় পেলে লোকে ছাড়বে কেন, ব্যাঙের লাথিও খেতে হয়। নীরি তো সম্পর্কে বোন।
গয়া বললে—একটা কথা নীরি। আমার হাত অচল হয়েচে, কিছু নেই। কি করে চালাই বল দিকি?
নীরি সহানুভূতির সুরে বললে—তাই তো দিদি। কি বলি। ধান ভানতি পারবি কি আর? তা হলি পেটের ভাতের চালডা হয়ে যায় গতর থেকে।
—আমার নিজের ধান তো ভানি। তবে পরের ধান ভানি নি। কি রকম পাওয়া যায়?
—পাঁচাদরে।
—সেটা কি? বোঝলাম না।
—ভারি আমার মেমসায়েব আলেন রে!
সত্যি, গয়ামেম এ কখনো শোনে নি। সে চোদ্দ বছর বয়স থেকে বড় গাছের আওতায় মানুষ। সে এসব দুঃখু-ধান্ধার জিনিসের কোনো খবর রাখে না। বললে—সেডা কি, বুঝলাম না নীরি। বল না?
নীরি হি-হি ক’রে উচ্চরবে যে হাসিটা হেসে উঠলো, তার মধ্যেকার শ্লেষের সুর ওর কানে বড় বেশি ক’রে যেন বাজলো। কাল সকালে উঠেই সে চলে যাবে এখান থেকে।
দুঃখিত হয়ে বললে—অত হাশিডা কেন? সত্যি জানি নে। আমি মিথ্যে বলবো এ নিয়ে নীরি?
নীরি তাকে বোঝাতে বসলো জিনিসটা কাকে বলে। বড় পরিশ্রমের কাজ, সকালে উঠে ঢেঁকিতে পাড় দিতে হবে দুপুর পর্যন্ত। ধান সেদ্ধ করতে হবে। তার জন্যে কাঠকুটো কুড়িয়ে জড়ো করতে হবে। চৈত্র মাসে শুকনো বাঁশপাতা