পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩৫৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

দেখেই উঠিচি।

 ভবানী হেসে বললেন—খুব খারাপ লোকের মুখ তো?

 —অমন কথাই বলবেন না জামাইবাবু। আমি যদি আগে জানতাম আপনি আর আমার মা এখেনে এসে খাবেন, তবে পালমশায়কে বলতাম আর অন্য কোনো বামুন এল না এল, আপনার বয়েই গেল! এমন নিধি পেয়ে আবার বামুন খাওয়ানোর জন্যি পয়সা খরচ? কই, মা কোথায়? ছেলে একবার না দেখে যাবে না যে, বার হও মা আমার সামনে।

 তিলু আধঘোমটা দিয়ে এসে সামনে দাঁড়াতেই রামহরি হাত জোড় ক’রে নমস্কার করে বললেন—যেমন শিব, তেমনি শিবানী। দিনডা বড্ড ভালো গেল আজ পালমশাই। মা, ছেলেডারে মনে রেখো।

 ভবানীকে তিলু ফিস্ ফিস্‌ ক’রে বললে—পুন্নিমের দিন আমাদের বাড়িতি দেবেন পায়ের ধুলো? খোকার জন্মদিনের পরবন্ন হবে। এসে খাবেন।

 এই রকমই বিধি! পরপুরুষের সঙ্গে কথা কওয়ার নিয়ম নেই, এমন কি সামনেও কথা বলবার নিয়ম নেই। একজনকে মধ্যস্থ ক’রে কথা বলা যায় কিন্তু সরাসরি নয়। ভবানী বুঝিয়ে বলবার আগেই রামহরি চক্রবর্তী বললেন—আমি তাই করবো মা! পরবন্ন খেয়ে আসবো। এ আমার ভাগ্যি। এ ভাগ্যির কথা বাড়ি গিয়ে তোমার বৌমার কাছে গল্প করতি হবে।

 —তাঁকেও আনবেন না?

 —না মা, সে সেকেলে। আপনাদের মত আজকালের উপযুক্ত নয়। সে পুরুষমানুষের সামনে বেরুবেই না। আমিই এসে আমার খোকন ভাইয়ের সঙ্গে পরবন্ন ভাগ করে খেয়ে যাবো আর আপনাদের গুণ গেয়ে যাবো।


 নীলমণি সমাদ্দারের স্ত্রী আন্নাকালী তাঁর পুত্রবধূ সুবাসীকে বললেন—হ্যাঁ বৌমা, কিছু শুনলে নাকি গাঁয়ে? ও দিকির কথা?

 পুত্রবধু জানে শাশুড়ী ঠাকরুণ বলচেন, বড়লোকের বাড়ীর দুর্গোৎসবে জাঁকালী নেমতন্নটা ফস্‌কে যাবে, না টিকে থাকবে! ওদের অবস্থা হীন

৩৫১