—ভজা মুচি কোথায়? ও আমার কথা একটু-আধটু শোনে।
—সেও সেখানে আছে।
—বড় সায়েবও আছে?
—কেন থাকবে না। যাবে কনে?
—ভেতরে ভেতরে কেমন লোক বড় সায়েব?
গয়া সলজ্জ চোখ দুটি মাটির দিকে নামিয়ে বললে-ওই এক রকম বাইরে যতটা গোঁয়ারগোবিন্দ দেখেন ভেতরে কিন্তু ততটা নয়। বাবাঃ, সব ভালো কিন্তু ওদের গায়ে যে-
—গন্ধ?
—বোটকা গন্ধ তো আছেই। তা নয়, গায়ে বড্ড ঘামাচি। ঘামাচি পেকে উঠবে রোজ রাত্তিরি। মোর মাথার কাটা চেয়ে নিয়ে সেই ঘামাচি রোজ গালবে। কথাটা বলে ফেলেই গয়াব মনে পড়লো, বৃদ্ধ প্রসন্ন আমীনের কাছে, বিশেষত যাকে খুড়োমশাই বলে ডাকে তার কাছে, এ কথাটা বলা উচিত হয়নি। মনে হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে লজ্জা হলো বড্ড-সেটা ঢাকবার চেষ্টায় তাড়াতাড়ি উঠে বললে-যাই খুড়োমশাই, অনেক রাত হোল। বিস্কুট খাবেন? খান তো এনে দেবো এখন। আর এক জিনিস খায়-তারে বলে চিজ। বড্ড গন্ধ। মুই একবার মুখি দিয়ে শেষে গা ঘুরে মরি। তবে খেলি গায়ে জোর হয়।
গয়া মেম চলে গেলে প্রসন্ন আমীন মনের সাধে বোতল খুলে বিলিতি মদে চুমুক দিলেন। হাতে পয়সা আসে মন্দ; মাঝে মাঝে, দেওয়ানজির কৃপায়। কিন্তু এসব মাল জোটানো শুধু পয়সা থাকলেই বুঝি হয়? হদিস জানা চাই। দেওয়ানজির এসব চলে না, একেবারে কাঠখোট্টা লোক। ও পারে শুধু দাঙ্গা-হাঙ্গামা বাধতে। কি ভাবেই রাহাতুনপুরটা পুড়িয়ে দিলে রাত্তিরে। এই ঘরে বসেই সব সলাপরামর্শ ঠিক হয়, প্রসন্ন আমীন জানে না কি। ম্যাজিষ্ট্রেটই আসুক আর যেই আসুক, নীলকুঠির সীমানার মধ্যে ঢুকলে সব ঠাণ্ডা।
তা ছাড়া রাজার জাত রাজার জাতের পক্ষে কথা বলবে না তো কি বলবে কালা আদমিদের দিকে?