পাতা:ইতিহাস - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

ইতিহাস

বীর্য ও ক্ষমা, রাজোচিত মহত্বে উজ্জ্বল হইয়া ফুটিয়াছে। তাই ম্যালিসন তাঁহার উল্লেখ করিয়া বলিয়াছেন, সেই পরিণামদারুণ মহানাটকের প্রধান অভিনেতাদের মধ্যে সিরাজদ্দৌলাই একমাত্র লোক যিনি প্রতারণা করিবার চেষ্টা করেন নাই।

 দ্বন্দ্বের আরম্ভটি পত্রযুগলসমন্বিত তরুর অঙ্কুরের ন্যায় ক্ষুদ্র ও সরল, কিন্তু ক্রমশ নানা লোক ও নানা মতলবের সমাবেশ হইয়া তাহা বৃহৎ বনস্পতির ন্যায় বিস্তৃত ও জটিল হইয়া পড়িল।

 নিপুণ সারথি যেমন এক কালে বহু অশ্ব যোজনা করিয়া রথ চালনা করিতে পারে, অক্ষয়বাবু তেমনি প্রতিভাবলে এই বহুনায়কসংকুল জটিল দ্বন্দ্ববিবরণকে আরম্ভ হইতে পরিণাম পর্যন্ত সবলে অনিবার্যবেগে ছুটাইয়া লইয়া গিয়াছেন।

 তাঁহার ভাষা যেরূপ উজ্জ্বল ও সরস, ঘটনাবিন্যাসও সেইরূপ সুসংগত, প্রমাণবিশ্লেষণও সেইরূপ সুনিপুণ। যেখানে ঘটনাসকল বিচিত্র এবং নানাভিমুখী, প্রমাণসকল বিক্ষিপ্ত, এবং পদে পদে তর্কবিচারের অবতারণা আবশ্যক হইয়া পড়ে, সেখানে বিষয়টির সমগ্রতা সর্বত্র রক্ষা করিয়া তাহাকে ক্ষিপ্রগতিতে বহন করিয়া লইয়া যাওয়া ক্ষমতাশালী লেখকের কাজ। বিশেষত প্রমাণের বিচারে গল্পের সূত্রকে বিচ্ছিন্ন করিয়া দেয়, কিন্তু সেই-সকল অনিবার্য বাধা-সত্ত্বেও লেখক তাঁহার ইতিবৃত্তকে কাহিনীর ন্যায় মনোরম করিয়া তুলিয়াছেন, এবং ইতিহাসের চিরাপরাধী-অপবাদগ্রন্ত দুর্ভাগা সিরাজদ্দৌলার জন্য পাঠকের করুণা উদ্দীপন করিয়া তবে ক্ষান্ত হইয়াছেন।

 কেবল একটা বিষয়ে তিনি ইতিহাস-নীতি লঙ্ঘন করিয়াছেন। গ্রন্থকার যদিচ সিরাজ-চরিত্রের কোনো দোষ গোপন করিতে চেষ্টা করেন

১২৪