পাতা:ইতিহাস - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৮০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

ইতিহাস

চলিতেছিল তেমনি আর-এক দিকে পরস্পরের সমাজ ও ধর্মের সামঞ্জস্যসাধন-চেষ্টারও বিশ্রাম ছিল না। কী করিলে পরস্পরে মিলিয়া এক বৃহৎ সমাজ গড়িয়া উঠে, অথচ পরস্পরের স্বাতন্ত্র্য একেবারে বিলুপ্ত না হয়, এই দুঃসাধ্য-সাধনের প্রয়াস বহুকাল হইতে ভারতে চলিয়া আসিতেছে, আজও তাহার সমাধান হয় নাই।

 য়ুনাইটেড স্টেট্‌সের ইতিহাসে যে ঐতিহাসিক প্রক্রিয়া চলিতেছে তাহার সঙ্গে ভারত-ইতিহাসের কিছু মিল আছে, কিন্তু অমিলও যথেষ্ট। সেখানে য়ুরোপের নানা স্থান হইতে নানা জাতি মিলিতেছে। কিন্তু তাহারা একই বর্ণের, সুতরাং তাহাদের মিলনের বাধা সুগভীর নহে। তাহা ছাড়া, য়ুরোপের সকল উপজাতির মধ্যে সভ্যতার রূপভেদ নাই। নিগ্রোদের সমস্যার কোন ভালো মীমাংসা আজ পর্যন্ত সেখানে হয় নাই বলিয়া কেবলই দুঃখ অত্যাচার অবিচারের সৃষ্টি হইতেছে, ইহাতেই মনুষ্যত্বের পীড়া ঘটে। এই পীড়া দুর্বল সবল উভয়কেই স্পর্শ করে। তাহা ছাড়া এসিয়াবাসীদের সম্বন্ধে শুধু আমেরিকায় নহে য়ুরোপের সকল উপনিবেশেই বিরোধ চলিতেছে। এসিয়াবাসীকে একেবারে নির্বাসিত করিয়া রাখিলে এই বিরোেধ দেশের বাহিরে গিয়া কালক্রমে আরো প্রবল হইয়া জমিতে থাকিবে এবং একদিন ইহার হিসাব-নিকাশ করিতেই হইবে। আমেরিকার ইতিহাসে আর একটা ব্যাপার দেখিতে পাই, তাহাকে ঐক্যসাধন না বলিয়া একাকারীকরণ বলা যায়। যে-কোনো জাতীয় লোক আমেরিকায় স্থায়ীভাবে বাস করিতে আসে ভাষায় আচারে ব্যবহারে তাহাকে সম্পূর্ণই আমেরিকান করিয়া তুলিবার চেষ্টা করা হয়। ইহাতে রাষ্ট্রীয় দিক হইতে সুবিধা হইতে পারে, কিন্তু বৈচিত্র্যমূলক মানবসভ্যতার দিক হইতে ইহাতে ক্ষতিই ঘটে। সৃষ্টিতত্বে যে পরিণতিক্রিয়া দেখি তাহাতে একাকারত্ব আরন্তে দেখা যায়,

৭৬