ॐ१ ইন্দির। আমি বলিলাম, “আমি মাহিনী চাই না। না লইলে যদি কোন গোলযোগ উপস্থিত হয়, এজন্ত হাত পাতিয়া মাহিয়ানা লইব । লইয়া তোমার নিকট রাখিব, তুমি কাঙ্গাল গরীবকে দিও। আমি আশ্রয় পাইয়াছি, এই আমার পক্ষে যথেষ্ট ।” নবম পরিচ্ছেদ পাকচুলের স্থখ দুঃখ আমি আশ্রয় পাইলাম। আর একটি অমূল্য রত্ন পাইলাম—একটি হিতৈর্ষিণী সখী । দেখিতে লাগিলাম যে, সুভাষিণী আমাকে আন্তরিক ভালবাসিতে লাগিল— আপনার ভগিনীর সঙ্গে যেমন ব্যবহার করিতে হয়, আমার সঙ্গে তেমনই ব্যবহার করিত। তার শাসনে দাসদাসীরাও আমাকে অমান্ত করিত না । এদিকে রান্নাবান্না সম্বন্ধেও সুখ হইল। সেই বুড়ী ব্রাহ্মণঠাকুরাণী—তাহার নাম সোণার মা,—তিনি বাড়ী গেলেন না। মনে করিলেন, তিনি গেলে আর চাকরিটি পাইরেন না, আমি কায়েম হইব। তিনি এই ভাবিয়া নানা ছুতা করিয়া বাড়ী গেলেন না । স্বভাষিণীর সুপারিসে আমরা দুই জনেই রহিলাম। তিনি শাশুড়ীকে বুঝাইলেন যে, কুমুদিনী ভদ্রলোকের মেয়ে, এক সব রাল্লা পারিয়া উঠিবে না—আর সোণার মা বুড় মানুষই বা কোথায় যায় ? শাশুড়ী বলিল, “ছুই জনকেই কি রাখিতে পারি ? এত টাকা যোগায় কে ?” - বধু বলিল, “তা এক জনকে রাখিতে হলে সোণার মাকে রাখিতে হয়। কুমু এত পারবে না।” গৃহিণী বলিলেন, “ন না। সোণার মার রান্না আমার ছেলে খেতে পারে না। তবে ছুই জনেই থাক।” আমার কষ্টনিবারণ জন্য সুভাষিণী এই কৌশলটুকু করিল। গিল্পী তার হাতে কলের পুতুল ; কেন না, সে রমণের বেী—রমণের বেীর কথা ঠেলে কার সাধ্য ? তাতে আবার স্বভাষিণীর বুদ্ধি যেমন প্রখর, স্বভাবও তেমনই মুন্দর। এমন বন্ধু পাইয়া, আমার এ দুঃখের দিনে একটু মুখ হইল। আমি মাছ মাংস রাখি, বা তুই একখান ভাল ব্যঞ্জন রাখি-বাকি সময়টুকু সুভাষিণীর সঙ্গে গল্প করি—তার ছেলে মেয়ের সঙ্গে গল্প করি ; হলো বা স্বয়ং গৃহিণীর
পাতা:ইন্দিরা-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৩৬
অবয়ব