নবম পরিচ্ছেদ : পাকাচুলের মুখ দুঃখ و چ তাই ঘাটের সজ্জা সাজিয়ে দিলে - 鰓 সি ঘুরে গোবরে।” একদিন একটা বিড়ালে হাড়ি হইতে মাছ খাইয়াছিল, তাহার মুখে কালি বুলি লাগিয়াছিল । সুভাষিণীর ছেলে তাহ দেখিয়াছিল। সে বুড়ীকে দেখিয়া বলিল, “ম । বুলী পিচী হালি কেয়েসে।” অথচ বামন ঠাকুরাণীর কাছে, আমার ইঙ্গিতমত, কথাটা কেহ ভাঙ্গিল না। তিনি অকাতরে সেই বানরমার্জারবিমিশ্র কাস্তি সকলের সম্মুখে বিকশিত করিতে লাগিলেন। হাসি দেখিয়া তিনি সকলকে জিজ্ঞাসা করিতে লাগিলেন, “তোমরা কেন হাসচ গ৷ ” সকলেই আমার ইঙ্গিতমত বলিল, “ঐ ছেলে কি বলচে শুনচো না ? বলে, বুলী পিচী হালি কেয়েসে। কাল রাতে কে তোমার হাড়িশালে হাড়ি খেয়ে গিয়েছে, তাই সবাই বলাবলি করচে, বলি সোনার মা কি বুড় বয়সে এমন কাজ করবে ?” বুড়ী তখন গালির ছড়া আরম্ভ করিল—“সর্ব্বনাশীরা। শতেকক্ষোয়ারীর । আবাগীরা ”—ইত্যাদি ইত্যাদি মন্ত্রোচ্চারণপূর্বক তাহাদিগকে এবং তাহাদিগের স্বামীপুত্রকে গ্রহণ করিবার জন্য যমকে অনেক বার তিনি আমন্ত্রণ করিলেন–কিন্তু যমরাজ সে বিষয়ে আপাততঃ কোন আগ্রহ প্রকাশ করিলেন না। ঠাকুরাণীর চেহারাখান সেই রকম রহিল। তিনি সেই অবস্থায় রমণ বাবুকে অল্প দিতে গেলেন। রমণ বাবু দেখিয়া হাসি চাপিতে গিয়া বিষম খাইলেন, আর র্তাহার খাওয়া হইল না । শুনিলাম রামরাম দত্তকে অন্ন দিতে গেলে, কর্ত্ত মহাশয় তাহাকে দূর দূর করিয়া তাড়াইয়া দিয়াছিলেন। শেষ দয়া করিয়া সুভাষিণী বুড়ীকে বলিয়া দিল, “আমার ঘরে বড় আয়ন আছে। মুখ দেখ গিয়া ।” বুড়ী গিয়া মুখ দেখিল। তখন সে উচ্চৈঃস্বরে কাদিতে লাগিল এবং আমাকে গালি পাড়িতে লাগিল। আমি বুঝাইতে চেষ্টা করিলাম যে, আমি চুলে মাখাইতে বলিয়াছিলাম, মুখে মাখাইতে বলি নাই। বুড়ী তাহা বুঝিল না। আমার মুণ্ডভোজনের জন্ত যম পুনঃপুনঃ নিমন্ত্রিত হইতে লাগিলেন। শুনিয়া-স্বভাষিণীর মেয়ে শ্লোক পড়িল— “যে ডাকে যমে । তার পরমাই কমে । তার মুখে পড়ুক ছাই। বুড় মরে যা ন ভাই ।”
পাতা:ইন্দিরা-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৪১
অবয়ব