চতুর্দশ পরিচ্ছেদ ; আমার প্রাণত্যাগের প্রতিজ্ঞ 敬役 সে অশ্রুঞ্জল তিনি বুঝিতে পারিলেন না। তিনি বলিলেন, “কঁাদিলে কেন ? আমি ত তোমাকে ডাকি নাই—তুমি আপনি আসিয়াছ—তবে র্কাদ কেন ?” এই নিদারুণ বাক্যে বড় মর্ম্মপীড়া হইল। তিনি যে আমাকে কুলটা মনে করিতেছেন— ইহাতে চক্ষুর প্রবাহ আরও বাড়িল। মনে করিলাম, এখন পরিচয় দিই—এ যন্ত্রণ আর সহ হয় না, কিন্তু তখনই মনে হইল যে, পরিচয় দিলে যদি ইনি না বিশ্বাস করেন, যদি মনে করেন যে, “ইহার বাড়ী কালাদীঘি, অবশু আমার স্ত্রীহরণের বৃত্তান্ত শুনিয়াছে, এক্ষণে ঐশ্বর্য্যলোভে আমার স্ত্রী বলিয়া মিথ্যা পরিচয় দিতেছে”—তাহা হইলে কি প্রকারে ইহার বিশ্বাস জন্মাইব ? স্বতরাং পরিচয় দিলাম না। দীর্ঘনিশ্বাস ত্যাগ করিয়া, চক্ষুর জল মুছিয়া, তাহার সঙ্গে কথোপকথনে প্রবৃত্ত হইলাম। অন্যান্য কথার পরে তিনি বলিলেন, “কালাদীঘি তোমার বাড়ী শুনিয়া আমি আশ্চর্য্য হইয়াছি। কালাদীঘিতে যে এমন সুন্দরী জন্মিয়াছে, তাহ আমি স্বপ্নেও জানিতাম না।” র্তার চক্ষের প্রতি আমি লক্ষ্য করিতেছিলাম, তিনি বড় বিস্ময়ের সহিত আমাকে দেখিতেছিলেন। তার কথার উত্তরে আমি নেকী সাজিয়া বলিলাম, “আনি সুন্দরী না বান্দরী। আমাদের দেশের মধ্যে আপনার স্ত্রীরই সৌন্দর্য্যের গৌরব।” এই ছলক্রমে তাহার স্ত্রীর কথা পাড়িয়াই জিজ্ঞাসা করিলাম, “ৰ্তাহার কি কোন সন্ধান পাওয়া গিয়াছে ?” উত্তর । ন! —তুমি কত দিন দেশ হইতে আসিয়াছ ? আমি বলিলাম, “আমি সে সকল ব্যাপারের পরেই দেশ হইতে আসিয়াছি। তবে বোধ হয়, আপনি আবার বিবাহ করিয়াছেন।” উত্তর । না । বড় বড় কথায়, উত্তর দিবার তাহার অবসর দেখিলাম না। আমি উপযাচিক, অভিসারিকা হইয়া আসিয়াছি,—আমাকে আদর করিবারও তার অবসর নাই। তিনি সবিস্ময়ে আমার প্রতি চাহিয়া রহিলেন। একবারমাত্র বলিলেন, “এমন রূপ ত মানুষের দেখি নাই ।” সপত্নী হয় নাই, শুনিয়া বড় আহলাদ হইল। বলিলাম, “আপনারা যেমন বড়লেক, এটি তেমনই বিবেচনার কাজ হইয়াছে। নহিলে যদি এর পর আপনার স্ত্রীকে পাওয়া যায়, তবে দুই সতীনে ঠেঙ্গাঠেঙ্গি বাধিবে।” তিনি স্বত্ব হাসিয়া বলিলেন, “সে ভয় নাই। সে স্ত্রীকে পাইলেও আমি আর গ্রহণ করিব, এমন বোধ হয় না । তাহার আর জাতি নাই বিবেচনা করিতে হইবে।”
পাতা:ইন্দিরা-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৫৯
অবয়ব