পঞ্চমবারের বিজ্ঞাপন ইন্দির ছোট ছিল—বড় হইয়াছে। ইহা যদি কেহ অপরাধ বলিয়া গণ্য করেন, তবে ইন্দিরা বিনীতভাবে নিবেদন করিতে পারে যে, এমন অনেক ছোটই বড় হইয়া থাকে। ভগবানের ইচ্ছায় নিত্যই ছোট, বড় হইতেছে। রাজার কাজ ত এই দেখি, ছোটকে বড় করিয়া, বড়কে ছোট করেন। সমাজও দেখিতে পাই বড়কে ছোট, ছোটকে বড় করেন। আমিও যাহার অধীন, সে না হয়, আমাকে ছোট দেখিয়া, বড় করিল। তার আর কৈফিয়ৎ কি দিব ? তবে দোষের কথাটা এই যে, বড় হইলে দর বাড়ে। রাজার কৃপায় বা সমাজের কৃপায় র্যাহারা বড় হয়েন, তাহারা বড় হইলেও আপনার আপনার দর বাড়াইয়া বসেন। এমন কি পুলিসের জমাদার যিনি এক টাকা ঘুযেই সন্তুষ্ট, দারোগ হইলেই তিনি দুই টাকা চাহিয়া বসেন, কেন না, বড় হইয়া তাহার দর বাড়িয়াছে। গরীব ইন্দিরা বলিতে , পারে, আমি হঠাৎ বড় হইলাম, আমার কেন দর বাড়িবে না ? - তবে, ইন্দিরা বড় হইয়া ভাল করিয়াছে, কি মন্দ করিয়াছে, সেটা খুব সংশয়ের স্থল। সেটার বিচার আবশ্বক বটে। ছোট, ছোট থাকিলেই ভাল। ছোট লোক বড় হইয়া কবে ভাল হইয়াছে ? কিন্তু অনেক ছোট লোকেই তাহা স্বীকার করিবে না। ইন্দির কেন তাহা স্বীকার করিবে ? পাঠক বোধ হয়, ইনিরার কলেবর বৃদ্ধির কারণ জানিতে ইচ্ছা করিতে পারেন। তাহা বুঝাইতে গেলে, আপনার পুস্তকের আপনি সমালোচনায় প্রবৃত্ত হইতে হয়। সে অবিধেয় কার্য্যে আমার প্রবৃত্তি নাই। যিনি বোদ্ধা, তিনি ছোট ইন্দিরাখানি মনঃসংযোগ দিয়া পাঠ করিলেই জানিতে পরিবেন যে, তাহাতে কি কি দোষ ছিল এবং এক্ষণে তাহ কি প্রকারে সংশোধিত হইয়াছে। প্রকৃত পক্ষে, পুরাতন নামে এ একখানা নূতন গ্রন্থ। নূতন গ্রন্থ প্রণয়নে সকলেরই অধিকার আছে। গ্রন্থকারের ইহাই যথেষ্ট সাফাই।
পাতা:ইন্দিরা-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৭
অবয়ব