একবিংশতিতম পরিচ্ছেদ : সেকালে যেমন ছিল כף প্রকারাস্তরে “গাই” বলিলেন, এমন সময়ে আমি দ্বার হইতে মুখ বাড়াইয়া জিজ্ঞাসা করিলাম, “যমুনা দিদি । কি গা ?” যমুনা দিদি বলিলেন, “একটা গাই ভাই ।” আমি জিজ্ঞাসা করিলাম, “গাই কেন গা ?” কামিনী আমার পাশ হইতে বলিল, “ডেকে ডেকে যমুনা দিদির গলা কাঠ হইয়া গিয়াছে। একবার পিওবে।” হাসির চোটে সভাপত্নী মহাশয় নিবিয়া গেলেন, কামিনীর উপর গরম হইয়। বলিলেন, “একরত্তি মেয়ে, তুই সকল হাড়িতে কাটি দিস কেন লো কামিনি ?” কামিনী বলিল, “আর ত কেউ তোমার ভুসি কলাই সিদ্ধ করিতে জানে না।” এই বলিয়া কামিনী পলাইল, আমিও পলাইলাম। আবার একবার গিয়া উকি মারিলাম, দেখি পাড়ার পিয়ারী ঠান্দিদি, জাতিতে বৈদ্য—বয়স পঞ্চষষ্টি বৎসর, তার মধ্যে পঞ্চবিংশতি বৎসর বৈধব্যে কাটিয়াছে—তিনি সর্ব্বাঙ্গে অলঙ্কার পরিয়া ঘাঘরা পরিয়া, রাধিক সাজিয়া আসিয়াছেন। আমার স্বামীকে লক্ষ্য করিয়া কৃষ্ণ কৈ ? কৃষ্ণ কৈ ? বলিয়৷ সেই কামিনীকুঞ্জবন পরিভ্রমণ করিতেছেন। আমি জিজ্ঞাসা করিলাম, “কি খোজ ঠানদিদি ?” তিনি বলিলেন, “আমি কৃষ্ণকে খুজি ।” কামিনী বলিল, “গোয়ালাবাড়ী যাও—এ কায়েতের বাড়ী।” রসিকতাপ্রবীণ বলিল, “কায়েতের বাড়ীই আমার কৃষ্ণ মিলিবে ।” কামিনী বলিল, “ঠানদিদি, সকল জাতেই জাত দিয়াছ নাকি ?” এখন পিয়ারী ঠাকুরাণীর এককালে তেলি অপবাদ ছিল। এই কথায়, তিনি তেলে বেগুনে জ্বলিয়া উঠিয়া কামিনীকে ব্যঙ্গচ্ছলে গালি পাড়িতে আরম্ভ করিলেন। আমি র্তাকে থামাইবার জন্য, যমুনা দিদিকে দেখাইয়া দিয়া বলিলাম, “রাগ কর কেন ? তোমার কৃষ্ণ ঐ যমুনায় কাপ দিয়াছেন। এসো—তোমায় আমায় পুলিনে দাড়াইয়া একটু কাদি।” যমুনা ঠাকুরাগী “মহিষী” শব্দের অর্থবোধে যেমন পণ্ডিত,“পুলিন" শব্দের অর্থবোধেও সেইরূপ। তিনি ভাবিলেন, আমি বুঝি কোন পুলিনবিহারীর কথার ইঙ্গিত করিয়া তাহার অকলঙ্কিত সতীত্বের—(অকলঙ্কিত র্তাহার রূপের প্রভাবে )—প্রতি কোন প্রকার ইঙ্গিত করিয়াছি। তিনি সক্রোধে বলিলেন, “এর ভিতর পুলিন কে লো ?”
পাতা:ইন্দিরা-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৮১
অবয়ব