বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:উনিশে মে- ভাষার সংকট - রণবীর পুরকায়স্থ (২০২১).pdf/১১১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উনিশে মে : ভাষার সংকট ০ ১০৯ উত্তর-পূর্বের কথাসাহিত্যিকরা ছাতা টাঙিয়ে নেন। সময় বড়ো শিক্ষক, শিকড়ের সঙ্গে সম্পর্কিত হতে সময় নিয়েছে এক ঝাঁক নবীন কথাকারের উদয়ে উদ্ভাসিত হয়েছে নতুন দিগন্ত। কয়েকটা নাম না বললে কালের কাছে অপরাধী হয়ে থাকতে হবে। প্রথমেই নাম করা যায় মিথিলেশ ভট্টাচার্য ও শেখর দাশের। তারপর দুলাল ঘোষ অরিজিৎ চৌধুরি মলয় কান্তি দে দেবব্রত দেব কিশোররঞ্জন দে বদরুজ্জামান চৌধুরি। প্রথম কিস্তির এই কয়জন উল্লেখযোগ্য এইজন্য যে এরা একটা মাত্রা ঠিক করে দিয়েছেন উত্তর-পূর্বের কথাসাহিত্যে এদের রাজত্বকাল চলতে চলতেই এলেন নতুন নৃপতিরা দেবীপ্রসাদ সিংহ, সুব্রত কুমার রায় অমিতাভ দেব চৌধুরি কান্তারভূষণ নন্দী পল্লব ভট্টাচার্য দেবব্রত চৌধুরি স্বপ্না ভট্টাচার্য, ঝুমুর পাণ্ডে অনুগল্পের প্রতিভা শর্মিলা দত্ত। আর সর্বশেষ সংযোজন মেঘলমালা দে। এককালের গল্পকার পরেশ দত্ত, কুমার অজিত দত্ত ও অধুনার হিমাসিশ ভট্টাচার্য বাণিজ্যিক পত্রিকায়ও লিখেছেন সুনামের সঙ্গে। এখন তো অনেক শক্তিশালী কথাকার লিখছেন, সবার নাম জানানো উদ্দেশ্যে নয় বলে আপাতত যতি। শুরুতেই উত্তর-পূর্বের ইতিহাস ভূগোল নিয়ে লেখা হয়ে গেল বিস্তর। কিন্তু সেই জটিল খণ্ডভূমি আর টুকরো সময়ের কথকতা তো লেখা হল না ষাট বছর হয়ে গেল। দেশভাগের কথা কি ভুলে গেল তবে উত্তর-পূর্বের নবীন বাঙালি। আসলে এই নতুন অর্জিত ভূমিতে নবীন প্রজন্মের গৃহবাসী হওয়ার জন্য সময়ের দরকার ছিল। শরণার্থী জীবনের যন্ত্রণা আর ভাত কাপড় ভিটের ব্যবস্থা করতে গিয়ে শিল্প সাহিত্যের নন্দনে চোখ দেওয়ার সময় পায়নি উৎখাত মানুষ। জীবনের নিয়ত টানাপোড়েন আর সংঘাতের টাটকা প্রতিবেদন তাই উঠে আসে নি কোথাও। কিন্তু সময় কখনও প্রবঞ্চনা করে না। সব জমিয়ে রাখে সঠিক প্রকাশের জন্য। কারণ তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় আবেগের প্রশ্রয় থাকে বিস্তর। আবেগ কাটিয়ে থিতু হতে সময় লেগে গেল বলেই মলয় কান্তি দে লিখতে পারলেন ‘আশরাফ আলির স্বদেশ' নামের কালজয়ী ছোটোগল্প, যা দেশভাগের এক মর্মান্তিক দলিল হয়ে থাকবে মহাকালের মহাফেজখানায়। এই একটি মাত্র গল্প দিয়েই কি দেশ ভাগের কথকতা শেষ হয়ে গেল উত্তর পূর্বের। আসলে মলয়কান্তি বর্তিকা বহনের কাজ করেছেন এগিয়ে থেকে। দেশভাগজনিত প্রব্রজনের জন্য উত্তরপূর্বাঞ্চলের বাংলা সাহিত্যের গতি শ্লথ থাকাও হয়তো একটা কারণ হতে পারে। তিনদিকে সীমান্তের নিষেধ থাকায় মূল স্রোত মূল দেশের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতাও কারণ হতে পারে। উত্তর-পূর্বাঞ্চল থেকে স্থলপথে রেলপথে ভারত দেশের সঙ্গে যোগাযোগের সাধন শুধু সীমিতই ছিল না, ছিল দুর্গমও। ফারাক্কা সেতু হওয়ার আগে রেলভ্রমণের কথা এখন ভাবাই যায় না, আর পাহাড় লাইনের বরাক উপত্যকা তো এখনও যেমনকে তেমন। ফলত বই পত্রপত্রিকা পাওয়া সহজ ছিল না। এখনও তেমন সহজ নয় বরং দেশভাগের আগে এবং অব্যবহিত পরেও গ্রাহক করার ডাকে পাঠানোর