বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:উনিশে মে- ভাষার সংকট - রণবীর পুরকায়স্থ (২০২১).pdf/৫০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
উনিশে মে : ভাষার সংকট □ ৪৮

কিছুই হবে না। তখনই ছাত্রনেতারা আবার ভোটের রাজনীতিতে নড়ে চড়ে বসে। আসুর ছাত্র নেতা সর্বানন্দ সোনোয়াল সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেন ইললিগ্যাল মাইগ্রেণ্টস (ডিটারমিনেশন বাই ট্রাইব্যুনাল) অ্যাক্ট ১৯৬৩ বা আইএমডিটি অ্যাক্ট বাতিল করে তথাকথিত বিদেশি বিতাড়ন ত্বরান্বিত করতে, এবং তিনি জিতেও যান। তখন ডি ভোটার মানে ডাউটফুল ট্যাড়া পড়ত শুধু ভোটার তালিকায়। সন্দেহজনক নির্বাচক। এখন বলা হল সুপ্রিম কোর্টের তত্ত্বাবধানে এনআরসি হবে মানে আসামের জন্য ন্যাশনাল রেজিস্টার অফ সিটিজেন্স। এবং ভূতের বদ্যিরা বিদেশি বাছাই করতে সবরকম সর্বে ঝাড়াই বাছাই শুরু করলেন। উত্তরাধিকার সূত্র বা লিগ্যাসি ডাটা তারপর বংশবৃক্ষ তৈরি করে দিতে হবে, সেই বংশের ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বংশধরদের যাতে এক গাছের তলায় পাওয়া যায়, নইলে বিদেশি, ঠাঁই খোঁয়াড়ে, ডিটেনশন ক্যাম্পে। এতসব পরীক্ষা নিরীক্ষার পর ৩১/১২/২০১৭-তে খসড়া পঞ্জি প্রকাশিত হয়। বাকি থাকে এক কোটি ঊনচল্লিশ লক্ষ আবেদনকারির নাম। যার মধ্যে বেশির ভাগই বাঙালি কারণ অসমীয়ারা যে রাজার জাত তারা অরিজিননেল ইনহ্যাবিটেণ্ট বা ওআই। তাদের জন্য কোনো বাছবিচার নেই। বাঙালি এনওআই মানে ‘নন' আদি বাসিন্দা বা খিলঞ্জিয়া নন। এবার দ্বিতীয় এবং চূড়ান্ত পঞ্জি প্রকাশিত হওয়ার কথা ত্রিশ জুন ২০১৮। যাদের নাম থাকবে না তাদের কী হইবে তবে। ভাবতেও ভয় হয়, নব রোহিঙ্গিয়া বাঙালির জন্য হচ্ছে বড় বড় ডিটেনশন ক্যাম্প। এশিয়ার সর্ববৃহৎ। ওখানে থাকবে সর্ব সুখ, ভাত কাপড় শুধু আর কিছু না। যতদিন পর্যন্ত অপুষ্টিতে ভোগে মৃত্যু না হয়। কোনো নাগরিক স্বাচ্ছন্দ্য থাকবে না। সমস্ত নাগরিক পরিষেবার জন্য এনআরসি বাধ্যতামূলক হয়ে যাবে। ভারতে আধার আসামে এনআরসি। উচ্চতম ন্যায়ালয়ের নির্দেশে নিযুক্ত এনআরসি সমন্বয়ক প্রতীক হাজেলা বাবু জানিয়েছেন যাদের নাম থাকবে না তাদের গতিবিধি নিয়ন্ত্রিত হবে। রেল বাস ট্রেনের টিকিট কাটতে এনআরসি পড়াশোনায় এনআরসি ব্যাবসা করতে এনআরসি এমনকি চিকিৎসা পরিষেবা পেতেও চাই এনআরসি। জার্মানির আউসভিৎসের বৃহৎ সংস্করণ রচিত হচ্ছে পৃথিবীর বৃহত্তম গণতন্ত্রের অঙ্গরাজ্য আসামে। এসব ঘটতে চলেছে একুশে ফেব্রুয়ারি আর উনিশে মের উজ্জ্বল উত্তরাধিকারকে রহস্যময় অন্ধকারে ডুবিয়ে দিতে, নিজ দেশে বাঙালিকে পরবাসী করে রাখতে। অসম দেশে বাঙালির অখণ্ড সত্তা এখন ধ্বংসের মুখোমুখি এক পরিকল্পিত নিধনযজ্ঞের আয়োজনে। আসামের বাঙালি সেদিনও, উনিশে মের আন্দোলন করেছে শান্তিপূর্ণ, ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছে। এখন হাজারো অজুহাতে দেশহীন সাব্যস্ত করার প্রক্রিয়াকেও শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ করছে, একবারও বিচার ব্যবস্থার প্রতি অনাস্থা জ্ঞাপন করেনি, প্রশাসনিক ব্যবস্থায় সমর্থন ও সহযোগিতা করেছে, লিগ্যাসি ডাটা আর বংশবৃক্ষ নিয়ে হাজার মাইল দূর পর্যন্ত ছুটে গেছে। আইন হাতে তুলে নেওয়ার কথা ভাবেনি, আসাম