না আসেন ততদিনের জন্য দশরথকে তৈলের কড়ার ভিতরে রাখিয়া সকলে তাঁহাদের পথ চাহিয়া রহিলেন।
ভরত মামার বাড়িতে সুখেই ছিলেন। এ সকল বিপদের কথা তিনি কিছুই জানিতে পারেন নাই। ইহার মধ্যে তিনি একদিন স্বপ্ন দেখিলেন যে, রাজা দশরথ অত্যন্ত ময়লা হইয়া গিয়াছেন, আর একটা পাহাড় হইতে পড়িয়া যাইতেছেন। পাহাড়ের নিচে তৈল ছিল, তিনি সেই তৈলে ডুবিয়া গেলেন। তারপর গাধার গাড়িতে চড়িয়া তিনি দক্ষিণ দিকে যাইতে লাগিলেন।
এইরূপ স্বপ্ন দেখিয়া ভরতের মন বড়ই খারাপ হইয়া গেল। তাই তিনি আর পরদিন বন্ধুগণের সহিত ভাল করিয়া আমোদ করিতে পারিলেন না। এমন সময়ে অযোধ্যা হইতে লোক আসিয়া বলিল, রাজকুমার, আপনি শীঘ্র অযোধ্যায় চলুন। সেখানে এমন কিছু হইয়াছে যে আপনার দেরি হইলে ক্ষতি হইতে পারে।’
এইসকল শুনিয়া ভরত তাড়াতাড়ি অযোধ্যায় চলিয়া আসিলেন। অযোধ্যায় আসিয়া দেখেন যে, তাহার আর আগের মত চেহারা নাই, রাস্তায় লোকজন চলিতেছে না, দোকান পাট বন্ধ, আর সকলেরই মুখ অতিশয় মলিন। দশরথের ঘরে গিয়া দেখিলেন তিনি সেখানে নাই, সুতরাং সেখান হইতে কৈকেয়ীর ঘরে গেলেন।
কৈকেয়ী হাসিভরা মুখে তাহাকে আশীৰ্বাদ করিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, ভাল আছ তো? পথে কোন কষ্ট হয় নাই?’ ভরত বলিলেন, আসিতে একটু পরিশ্রম হইয়াছে। কিন্তু মা, এত তাড়াতাড়ি কেন আমাকে ডাকিয়া আনিলে? বাবা কোথায়? 'কৈকেয়ী বলিলেন, বাছা, তোমার বাবা মরিয়া গিয়াছেন।”
এ কথা শুনিয়া ভরত 'হায় হায়’ করিতে করিতে অজ্ঞান হইয়া গেলেন। তাহার জ্ঞান হইলে পর কৈকেয়ী বলিলেন, বাছা, তোমার বুদ্ধি হইয়াছে, তুমি কেন এত অস্থির হইতেছ?” ভরত বলিলেন, ‘হায়! বাবা আমাদিগকে ছাড়িয়া কোথায় গেলেন। মা, বাবার কী অসুখ হইয়াছিল মরিবার সময় তিনি কী বলিয়া গিয়াছেন?”
কৈকেয়ী বলিলেন, বাছা, মরিবার সময় তোমার বাবা বলিয়ছেন, “হা রাম! হা সীতা! হা লক্ষ্মণ” আর বলিয়াছেন যে, যাহাবা রামকে অযোধ্যায় ফিরিয়া আসিতে দেখিবে তাহারাই সুখী।
এ কথা শুনিয়া ভরত বলিলেন, মা, দাদা তবে এখন কোথায়? কৈকেয়ী বলিলেন, ‘তোমার দাদা সীতা আর লক্ষ্মণকে লইয়া বনে গিয়াছেন। ভরত আশ্চর্য হইয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, ‘দাদা কী জন্য বনে গিয়াছেন? তিনি এমন কী অন্যায় কাজ করিয়াছেন যে র্তাহাকে বনে পাঠানো হইল?’
কৈকেয়ী বলিলেন, তিনি কোন অন্যায় কাজ করেন নাই। আমিই রাজাকে বলিয়া তাহাকে বনে পাঠাইয়াছি। রাজা আমাকে দুটি বর দিতে চাহিয়াছিলেন। আমি এই দুই বর লইয়াছি যে, রাম বনে যাইবে, আর তুমি রাজা হইবে। এখন এ সব তোমার হইল, তুমি রাজা হইয়া সুখে থাক।”
ভরতকে সুখী করিবার জন্যই কৈকেয়ী এমন পাপ করিয়াছিলেন। কিন্তু ভরত যে রামকে কতদূর ভালবাসিতেন, তাহা তিনি জানিতেন না। তাহার কাজে সুখী হওয়া দূরে থাকুক, ভরত দুঃখে আর রাগে একেবারে অস্থির হইয়া উঠিলেন। তাহার এতই রাগ হইল যে, কৈকেয়ী