পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/২২২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২২২
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

দুষ্টের মনে কিছুতেই দয়া হইল না। সে দাঁত কড়মড় করিয়া বলিল, “তোকে জিতিয়া লইয়াছি! এখন তো তুই আমাদের দাসী! চল্!” এই বলিয়া দুরাত্মা আরো নিষ্ঠুরভাবে তাঁহার চুল ধরিয়া টানিতে লাগিল৷

 হায় হায়! তখন কেহই সেই দুরাত্মার মাথা কাটিয়া তাঁহাকে উদ্ধার করিতে আসিলেন না! দ্রৌপদী “হা কৃষ্ণ! হা অর্জুন।” বলিয়া কত কাঁদিলেন, সকলই বৃথা হইল৷

 এইরূপে দুঃশাসন তাঁহাকে সভায় উপস্থিত করিলেও কেহই তাহাকে নিষেধ করিলেন না। তখন দ্রৌপদী বলিলেন, “ক্ষত্রিয়ের যে ধর্ম, আমার স্বামী তাহার মতোই কাজ করিয়াছেন, তাঁহার দোষ কি? কিন্তু এই দুরাত্মা আমাকে অপমান করিতেছে দেখিয়াও যখন সভার সকলে চুপ করিয়া আছে, তখন বুঝিলাম যে কুরুবংশের লোকেরা ধর্ম ভুলিয়া গিয়াছে, ভীষ্ম, দ্রোণ, বিদুর, ইহাদের আর কিছু তেজ নাই।”

 দ্রৌপদীর অপমানে পাণ্ডবেরা ক্রোধে অধীর হইয়াছেন, কিন্তু তাহাদের মুখে কথা নাই। এদিকে সেই পাষণ্ড দুঃশাসন দ্রৌপদীর চুল ধরিয়া টানিতে টানিতে তাঁহাকে অজ্ঞানপ্রায় করিয়া ‘দাসী! দাসী!’ বলিয়া আসিতেছে, আর কর্ণ, শকুনি বলিতেছে ‘বেশ! বেশ!’

 ভীষ্ম দ্রৌপদীকে বলিলেন, “যুধিষ্ঠির তোমাকে পণ রাখিয়া খেলিতে পারেন কি না, এ কথা আমি ঠিক বুঝিতে পারিতেছি না। তিনি অতিশয় ধার্মিক, কখনো অধর্মের কাজ করেন নাই। তিনি নিজেই শকুনির সহিত খেলিতে আসিয়াছে, আর তোমাব অপমান দেখিয়াও চুপ করিয়া আছে। কাজেই আমি বুঝিতেছি না, কি বলিব৷”

 দ্রৌপদী বলিলেন, “উঁহাকে দুষ্টেরা ডাকিয়া আনিল, তথাপি কি করিয়া বলিতেছেন যে উনি নিজেই খেলিতে আসিয়াছে? আর তাঁহাকে ফাঁকি দিয়া হারাইয়াছে! আপনাদের অনেকেরই পুত্র আর পুত্রবধু আছে, তাঁহাদের দিকে চাহিয়া আমার কথার বিচার করুন৷” এই বলিয়া তিনি কাঁদিতে থাকিলে দুঃশাসন তাঁহাকে আরো অপমান করিতে লাগিল৷

  তখন ভীম আর সহিতে না পারিয়া বলিলেন, “দেখ যুধিষ্ঠির! তোমার দোষেই দ্রৌপদীর এত অপমান হইল। যে হাতে তুমি পাশা খেলিয়াছ, সে হাত আজ পোড়াইয়া ফেলিব। সহদেব! শীঘ্র আগুন আন!”

 অর্জুন তখনি ভীমকে বুঝাইয়া বলিলেন, “কর কি দাদা! চুপ চুপ! ক্ষত্রিয়ের ধর্ম রাখিতে গিয়াই উনি এরূপ করিয়াছে, তাহা কি বুঝিতেছ না?”

 ভীম বলিলেন, “ধর্ম রাখিতে গিয়াছিলেন বলিয়াই তো এতক্ষণ উহার হাত পোড়াই নাই৷”

 এমন সময় ধৃতরাষ্ট্রের পুত্র বিকর্ণ বলিলেন, “আপনারা চুপ করিয়া আছে কেন? দ্রৌপদীর কথার বিচার করুন। আমার তো বোধহয় যুধিষ্ঠিরের দ্রৌপদীকে ওরূপ করিয়া পণ রাখার কোনো ক্ষমতা ছিল না। সুতরাং তিনি হারিলেও দ্রৌপদীর তাহা মানিয়া চলার কথা নহে৷”

 এ কথায় সভার লোক চিৎকার করিয়া বিকর্ণের প্রশংসা আর শকুনির নিন্দা করিতে লাগিল। কিন্তু কর্ণ বিকর্ণকে গালি দিয়া, দুঃশাসনকে বলিলেন, “দুঃশাসন, তুমি ইহাদের সকলের গায়ের কাপড় কাড়িয়া লও৷”

 এ কথা বলিবমাত্র পাণ্ডবেরা নিজ নিজ চাদর কয়খানি ছাড়িয়া দিলেন। দ্রৌপদীর