বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/২২৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ছেলেদের মহাভারত
২২৭

কিড়্ম্মিঢ়ঢ়্ রে! মোর নাম কিড়্ম্মিঢ়ঢ়্ আছে! বগের ভাই। তোরা কে বটেক্? তোন্দের্‌র্‌কে মুহি মজ্জাসে খাবো!”

 যুধিষ্ঠির বলিলেন, “কীর্মির! আমরা পাণ্ডুর পুত্র। আমাদের নাম যুধিষ্ঠির, ভীম, অর্জুন, নকুল, আর সহদেব৷” ভীমের নাম শুনিয়াই রাক্ষস বলিল, “হঁ—অ—অ? বভীম? কোন্ বেটা ব্‌ভীম্ রে? ওহার্‌র্‌কেই তো মুহি আগ্‌গেমে খাবো। বেট্টা মোর ভাইটাকে মারিলেক৷”

 ভীমের তাহাতে ভয় পাওয়ার কোনো কথাই নাই, তিনি ইহার পূর্বেই একটা গাছ লইয়া প্রস্তুত আছে। তারপর যুদ্ধটাও খুব জমাটরকমই হইল, তাহার কথা আর বাড়াইয়া বলিবার দরকার নাই। এ রাক্ষসটা খুব জোয়ান, হাত দিয়া, দাঁত দিয়া, পাথর ছুঁড়িয়া, সে অনেকক্ষণ যুদ্ধ করিল। শেষে ভীম তাহার হাত-পা মোচড়াইয়া ধরিয়া তাহাকে বন্ বন্ শব্দে ঘুরাইতে আরম্ভ করিলে সে চ্যাঁচাইতে চ্যাঁচাইতে অজ্ঞান হইয়া গেল। তারপর তাহার গলায় ভীমের হাতের দুই টিপ পড়িতেই কার্য শেষ৷

 পাণ্ডবদের বনবাসের সংবাদে সকলে নিতান্তই দুঃখিত হইলেন। কৃষ্ণ, ধৃষ্টদ্যুম্ন প্রভৃতি যদুবংশের আর পাঞ্চাল দেশের আত্মীয়েরা এবং আরো অনেকে তাঁহাদিগকে দেখিতে আসিয়া আক্ষেপ করিতে করিতে কৌরবদিগকে অনেক ধিক্কার দিলেন। উহারা সকলেই বলিলেন, “এই দুষ্টদিগকে মারিয়া আমরা আবার যুধিষ্ঠিরকে রাজা করিব৷”

 মুনি-ঋষিরা সর্বদাই পাণ্ডবদিগকে দেখিতে আসিতেন। সাধারণ লোকেরাও দলে দলে তাঁহাদিগকে দেখিতে আসিয়া তাঁহাদের সঙ্গে সেই বনেই থাকিয়া যাইত৷

 কাম্যক বনেই যে তাঁহারা আগাগোড়া ছিলেন, তাহা নহে, কখনো কাম্যক বনে, কখনো-বা নানা তীর্থে, এইরূপে ঘুরিয়া ফিরিয়া তাঁহারা সময় কাটাইতেন। একস্থানে অধিক দিন থাকিলে ফল-মূল মিলানো কঠিন হয়, শিকারও ফুরাইয়া যায়,কাজেই ঘুরিয়া বেড়াইবার বিশেষ দরকার ছিল৷

 বনে থাকায় খুবই কষ্ট তাহাতে সন্দেহ কি? আর শত্রুদিগকে সাজা দিবার ইচ্ছাও সকলেরই হয়। সুতরাং দ্রৌপদী যে পাণ্ডবদিগের দুঃখ দেখিয়া কাতর হইবেন, আর শত্রুদিগকে তাড়াইয়া নিজের রাজ্য লইবার জন্য যুধিষ্ঠিরকে বার বার পীড়াপীড়ি করিবেন, ইহা আশ্চর্য নহে। এসকল সময়ে ভীম সর্বদাই দ্রৌপদীর কথায় সায় দিতেন। কিন্তু যুধিষ্ঠির তাহাতে ব্যস্ত না হইয়া, মিষ্ট কথায় তাঁহাদিগকে বুঝাইয়া দিতেন যে, উহারা অন্যায় কাজ করিয়াছে বলিয়া পাণ্ডবদিগেরও তাহা করা উচিত নহে। ক্ষমা করাই যথার্থ ধর্ম, রাগের বশ হইয়া কাজ করিলে ধর্ম নষ্ট হয়৷

 তাহা ছাড়া, যুধিষ্ঠির বেশ জানতেন যে, দুর্যোধনের পক্ষে কর্ণ প্রভৃতি বড় বড় যে সকল বীর আছে, তাহাদিগকে ইচ্ছা করিলেই হারাইয়া দেওয়া যায় না। ইহার জন্য বিশেষ আয়োজন চাই। তাই তিনি ভীমকে বলিতেন, ‘ভাই! কর্ণ যে কত বড় যোদ্ধা, এ কথা ভাবিয়া আমার ঘুম হয় না৷’

 এ কথা উত্তর দেওয়া ভীমের পক্ষেও সহজ ছিল না। তাই তিনি মুখভার করিয়া চুপ করিয়া থাকিতেন৷

 এই সময় ব্যাসদেব পাণ্ডবদিগকে দেখিতে আসেন। তিনি যুধিষ্ঠিরকে বলিলেন, ‘তোমাকে প্রতিস্মৃতি নামক বিদ্যা শিখাইয়া দিতেছি। তুমি অর্জুনকে ইহা শিখাইবে। ইহার গুণে তিনি