পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/২৩৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৩৮
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

সঙ সাজাইলেন যে, দেখিলে বুঝিতে। তারপর তাহাকে দুই ধমক দিয়া বলিলেন, ‘খবরদার! ভুলিস না যেন—সকলের কাছে বলিবি তুই আমাদের গোলাম।’

 জয়দ্রথ কাঁপিতে কাঁপিতে তাহাতেই রাজি৷

 এইভাবে তাহাকে আনিয়া যুধিষ্ঠিরের সামনে উপস্থিত করা হইল। তাহার চেহারা দেখিয়া কি আর কেহ হাসি থামাইয়া রাখিতে পারে? যুধিষ্ঠির অবধি হাসিয়া অস্থির! ভীম বলিলেন, ‘মহারাজ, এই হতভাগা আমাদের গোলাম হইয়াছে! এখন ইহাকে ছাড়িব কিনা, দ্রৌপদীকে জিজ্ঞাসা করুন৷’

 সাজাটা যে ভালোরকমই হইয়াছে, তাহাতে আর ভুল নাই! কাজেই উহাকে ছাড়িয়া দেওয়াই মত হইল। যুধিষ্ঠির বলিলেন, যাও এমন কাজ আর করিও না৷

 সেখান হইতে বিদায় হইয়াই জয়দ্রথ শিবের তপস্যা আরম্ভ করিল। তপস্যায় তুষ্ট হইয়া যখন শিব বর দিতে আসিলেন তখন সে বলিল, ‘আমি পাঁচ পাণ্ডবকে যুদ্ধে পরাজয় করিব৷’

 শিব বলিলেন, ‘তুমি চারিজনকে পরাজয় করিবে, কিন্তু অর্জুনকে পারিবে না। অর্জুনকে পরাজয় করিবার শক্তি দেবতাদিগেরও নাই।’ এই বলিয়া শিব চলিয়া গেলেন, জয়দ্রথ বাড়ি ফিরিল৷

 এই সময়ে আর-একটা ঘটনা ঘটে। কর্ণ কেমন বীর ছিলেন, তাহা শুনিয়াছ। কর্ণ কানে অতি আশ্চর্য কুণ্ডল আর শরীরে কবচ (বর্ম) লইয়া জন্মগ্রহণ করেন। এই কুণ্ডল আর কবচ শরীরে থাকিতে তাঁহাকে মারিবার ক্ষমতা কাহারো ছিল না। অর্জুনকে ইন্দ্র বিশেষ স্নেহ করিতেন, আর কর্ণের সহিত যুদ্ধ উপস্থিত হইলে তাঁহার বড়ই বিপদের আশংকা দেখিয়া দুঃখিত থাকিতেন। তাই তিনি ভাবিলেন, এই কুণ্ডল আর কবচ লইয়া আসিব৷

 কর্ণ গঙ্গায় স্নান করিয়া সূর্যের স্তব করিতেন। সে সময়ে কেহ তাঁহার নিকট কিছু চাহিলে, তিনি তাহাকে ফিরাইতেন না, এই তাঁহার নিয়ম ছিল। একদিন ঠিক এইরূপ সময়ে, ইন্দ্র ব্রাহ্মণের বেশে তাঁহার নিকট উপস্থিত হইলেন৷

 ইন্দ্র যে কর্ণকে ফাঁকি দিয়া কুণ্ডল আর কবচ আনিতে যাইবেন, এ কথা সূর্যদেব আগেই জানিতে পারিয়া কর্ণকে সাবধান করিয়া দেন, আর উহা দিতে নিষেধ করেন। কিন্তু কর্ণ কখনো নিয়ম ভঙ্গ করিতেন না, কাজেই তিনি বলিলেন, আমার যখন নিয়ম আছে, তখন না দিয়া পারিব না৷

 এ কথায় সূর্য বলিলেন, তাহাই যদি হয়, তবে কুণ্ডল আর কবচের বদলে ইন্দ্রের নিকট হইতে ‘এক পুরুষ-ঘাতিনী’ নামক শক্তি চাহিয়া লইবে৷

 কর্ণ প্রথমে ইন্দ্রকে সামান্য ব্রাহ্মণ মনে করিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, “ঠাকুর, আপনার কি চাই?”

 ব্রাহ্মণ বলিলেন, ‘তোমার ঐ কুণ্ডল আর কবচ আমাকে দাও।’

 কর্ণ কুণ্ডল আর কবচের বদলে কত কিছু দিতে চাহিলেন—ধনরত্ন, গোরু বাছুর, এমন-কি, রাজ্যের কথা পর্যন্ত বাকি রাখিলেন না। ব্রাহ্মণ কি তাহা শোনে? তিনি কেবলই বলেন, ‘আমার ঐ কুণ্ডল আর কবচটি চাই৷’

 তখন কর্ণ বুঝিতে পারিলেন, এ ব্রাহ্মণ যে-সে ব্রাহ্মণ নহে স্বয় ইন্দ্র। কাজেই তিনি