পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৩০৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ছেলেদের মহাভারত
৩০৫

তাহাদিগকে অবহেলা করিতেছ? যুদ্ধ আরম্ভ হইলে আর তোমার মুখে এমন কথা শুনা যাইবে না।”

 কর্ণ বলিলেন, “আজ যদি যম, বরুণ, কুবের আর ইন্দ্রও বন্ধু বান্ধব লইয়া অর্জুনকে রক্ষা করিতে আসেন, তথাপি আমি তাহাদিগকে সুদ্ধ অর্জুনকে পরাজয় করিব।”

 শল্য বলিলেন, “তোমার ক্ষমতা খুব আছে বটে, কিন্তু কথা কও তাহার চেয়ে অনেক বেশি! তুমি কখনোই অর্জুনের সমান নহ। পলায়ন না করিলে, আজ তাহার হাতে তোমার প্রাণ যাইবে।”

 কর্ণ বলিলেন, “যখন অর্জুন আমাকে পরাজয় করিবে, তখন আসিয়া তাহার বড়াই করিও।”

 তখন শল্য, “বেশ কথা! তাহাই হইবে।” বলিয়া রথ চালাইয়া দিলেন।

 কর্ণ পাণ্ডব সৈন্য দেখিলেই বলিলেন, “তোমাদের মধ্যে যে অর্জুনকে দেখাইয়া দিবে, তাহাকে গাড়ি ভরিয়া রত্ন দিব, ছয় হাতির রথ দিব, একশত গ্রাম দিব, আর কৃষ্ণ আর অর্জুনকে মারিয়া তাহাদের সকল ধন দিব।”

এ কথায় শল্য হাসিয়া বলিলেন, “তোমার অত হাতি টাতি কিছুই দিতে হইবে না, অর্জুনকে অমনিই দেখিতে পাইবে।”

 এতক্ষণে কণের রাগ হইল; তিনি বলিলেন, “তুমি নিতান্ত মুখ, যুদ্ধের কিছুই জান না। তুমি চুপ কর; তোমার মতো একশোজনে আসিয়া বকিলেও আমি ভয় পাইব না।”

 শল্য বলিলেন, “তাই তো! তোমার দেখিতেছিমাথা খারাপ হইয়াছে! চিকিৎসার দরকার!”

 এইরূপে ক্রমাগত উপহাস করিয়া, শল্য কর্ণেব মন ভাঙ্গিয়া দিলেন। ইহার অর্থ আর কিছুই নহে, কর্ণের তেজ কমাইয়া দিবার জন্য পাণ্ডবদিগের নিকট যে প্রতিজ্ঞা করিয়াছেন, সেই প্রতিজ্ঞা পালন করা। যুদ্ধের সময়ও একটু সুযোগ পাইলেই, “ঐ দেখ অর্জুন কেমন বীর, তুমি উহার সঙ্গে পারিবে না।” এইরূপ নানাকথা বলিয়া তিনি বেচারাকে ব্যস্ত করিয়া তোলেন।

 তথাপি কর্ণ যেরূপ যুদ্ধ করিতে লাগিলেন তাহা অতি অদ্ভুত। অর্জুন যত কৌরব সৈন্য মারিলেন, কর্ণ তাহা অপেক্ষা কম পাণ্ডব সৈন্য মারিলেন না, ধৃষ্টদ্যুম্ন, দ্রৌপদীর পুত্রগণ, সাত্যকি, ভীম, সহদেব, শিখণ্ডী যুধিষ্ঠির ইহারা সকলে তাহার নিকট হইতে হঠিয়া গেলেন।

 যুধিষ্ঠির কর্ণের সহিত খুব যুদ্ধ করিয়াছিলেন। যুধিষ্ঠিরের বাণে কর্ণ একবার অজ্ঞান হইয়া যান, কিন্তু শীঘ্রই আবার উঠিয়া আসিয়া যুধিষ্ঠিরের পার্শ্বরক্ষক দুটিকে মারিয়া ফেলেন। তারপর ষাট বাণে তাহাকে কাতর করিয়া কর্ণ সিংহনাদ করিতেছেন, এমন সময় সাত্যকি, চেকিতান, যুযুৎসু, ধৃষ্টদ্যুম্ন প্রভৃতি অনেক যোদ্ধা আসিয়া তাহাকে চারিদিক হইতে আক্রমণ করিলেন।

 তথাপি কর্ণ কিছুমাত্র চিন্তিত হইলেন না। তাহার বাণে চারিদিক ছারখার হইয়া যাইতে লাগিল। যুধিষ্ঠিরের ধনুক আর বর্ম কাটিয়া, তিনি তাহাকে এমনি সংকটে ফেলিলেন যে কি বলিব। যুধিষ্ঠির এক শক্তি খুঁড়িয়া মারিলেন, কর্ণের বাণে তাহাও দুই খণ্ড হইয়া গেল। তারপর যুধিষ্ঠির চারিটা তোমর মারিয়া কর্ণকে কাতর করিলেন বটে, কিন্তু কর্ণ তথাপি তাহার ধ্বজ, তৃণ, রথাদি নাশপূর্বক তাহাকে বাণাঘাতে ব্যাকুল করিতে ছড়িলেন না।


উপেন্দ্র —৩৯