পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৩২৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩২৬
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

উপস্থিত হইলেন।

 এই সময় কুন্তী কাঁদিতে কাঁদিতে পাণ্ডবদিগকে বলিলেন, “বৎসগণ! কর্ণের জন্য জলাঞ্জলি দাও, সে তোমাদের জ্যেষ্ঠ ভাই ছিল৷”

 হায়! চিরকাল কর্ণের সহিত সাংঘাতিক শক্রতা করিয়া তাঁহাকে আহ্লাদপূর্বক নিধনের পর ইহা কি নিদারুণ সংবাদ! সে সংবাদ শুনিয়া পাণ্ডবদিগের ন্যায় বীরপুরুষেরাও আর স্থির থাকিতে পারিলেন না।

 তখন যুধিষ্ঠির দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিতে ফেলিতে কুন্তীকে বলিলেন, “মা। তুমি আমাদের জ্যেষ্ঠ ভ্রাতার কথা গোপন করিয়া কি অন্যায় কাজই করিয়াছ! আমরা তাহাকে বধ করিয়াছি, এ কথা ভাবিয়া এখন বুক ফাটিয়া যাইতেছে। হায়! এ কথা আগে বলিলে কি আর এ নিষ্ঠুর যুদ্ধ হইত?”


শান্তিপর্ব

দবধি যুধিষ্ঠির এ কথা জানিতে পাবিলেন যে, কর্ণ তাঁহাদের জ্যেষ্ঠ ভাই, সেই অবধি তাঁহার শোকে এবং না জানিয়া তাঁহাকে বধ করার জন্য দুঃখ আর অনুতাপে, তিনি একেবারে অধীর হইয়া পড়িলেন। যে বাজ্যের জন্য এমন ঘটনা ঘটে, তাহার প্রতি তাঁহার এতই ঘৃণা জন্মিয়া গেল যে, আর কিছুতেই সে রাজ্য ভোগ করিতে তাঁহার ইচ্ছা হইল না। ভাইদিগকে ডাকিয়া তিনি বলিলেন, “আমার রাজ্য করিতে ইচ্ছা নাই, রাজ্য ছাড়িয়া বনে গিয়া আমি তপস্যা করিব৷”

 এ কথায় সকলের মাথায় যেন আকাশ ভাঙ্গিয়া পড়িল। যে রাজ্যের জন্য এত ক্লেশ, এত রক্তপাত, সে রাজ্য হাতে পাইয়া কোন রাজা তাহা পালন এবং রক্ষার অবহেলা করিতে পারে? বনে যাওয়াই যদি কর্তব্য হয়, তবে এত কাণ্ডের কি প্রয়োজন ছিল? না হয় এই রাজ্য দ্বারা দান যজ্ঞাদি, ধর্ম কাজই হউক-না। ইহা ছাড়িয়া দিলে কি প্রশংসার কাজ হইবে?

 এইরূপে ভীম,অৰ্জুন,নকুল, সহদেব, দ্রৌপদী সকলে মিলিয়া যুধিষ্ঠিরকে কত বুঝাইলেন, কিন্তু কিছুতেই যুধিষ্ঠিরের মন শান্ত হইল না। তিনি সবিনয়ে ব্যাসকে বলিলেন, “ভগবন্! ধর্মের কথা আমাকে আরো ভালো করিয়া বলুন। কিরূপে একজন লোকে রাজ্যও করিতে পারে, আর ধর্মও করিতে পারে, এ কথা না বুঝিতে পারিয়া আমার মনে বড়ই চিন্তা হইতেছে৷”

 তখন ব্যাস তাঁহাকে বলিলেন, “যদি ভালো করিয়া ধর্মের কথা শুনিতে তোমার ইচ্ছা হইয়া থাকে, তবে কুরুকুলপিতামহ ভীষ্মের নিকটে যাও, তিনি তোমার সংশয় দূর করবেন।