পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৪৮৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মহাভারতের কথা
৪৮৭

কচ শিয়াল কুকুরের পেট ছিঁড়িয়া, তাঁহার নিকট আসিয়া উপস্থিত হইলেন। তাঁহাকে দেখিয়া দেবযানী জিজ্ঞাসা করিলেন, “কচ, তোমার আসিতে বিলম্ব হইল কেন?”

 কচ বলিলেন, “কাঠ কুড়াইতে কুড়াইতে বড় পরিশ্রম হইয়াছিল, তাই আমি গরুগুলি লইয়া একটা বটগাছের তলায় বিশ্রাম করিতেছিলাম। এমন সময় অসুরেরা আসিয়া আমাকে জিজ্ঞাসা করিল, ‘তুই কে?’ আমি বলিলাম, ‘আমি বৃহস্পতির পুত্র কচ।’ এ কথায় তাহারা আমাকে খণ্ড খণ্ড করিয়া, শিয়াল কুকুরকে খাইতে দিয়া, হাসিতে হাসিতে চলিয়া গেল। তারপর তোমার পিতার মন্ত্রের গুণে বাঁচিয়া উঠিয়া, এই আসিতেছি।”

 আর-একদিন কচ দেবযানীর জন্য ফুল আনিতে বনে গিয়াছেন, এমন সময় অসুরেরা আবার আসিয়া, তাঁহাকে মারিয়া ফেলিল। তারপর, আর যাহাতে শুক্র তাঁহাকে না বাঁচাইতে পারেন, সেজন্য ভারি আশ্চর্যরকমের এক কৌশল করিল।

 শুক্র মদ্য পান করিতেন। যে মদ খায়, তাহার সকল সময় কাণ্ড জ্ঞান থাকে না। এই মনে করিয়া তাহারা কচের দেহটাকে পোড়াইয়া, সেই দেহের ছাইগুলি শুক্রাচার্যের সুরার সহিত মিশাইয়া দিল। শুক্রাচার্যও নেশার ঝোঁকে তাহা খাইয়া ফেলিলেন, কিছুই বুঝিতে পারিলেন না!

 সেদিনও দেবযানী কচের জন্য কাঁদিতে লাগিলেন। কিন্তু অসুরেরা ক্রমাগতই কচকে মারিয়া ফেলিতেছে দেখিয়া, শুক্রের মনে উৎসাহ ছিল না। তাই তিনি দেবযানীকে বলিলেন—

 “উহাকে আর বাঁচাইয়া কি হইবে? অসুরেরা তাহাকে কিছুতেই ছড়িবে না। তুমি কাঁদিও না, মা! একটা সামান্য লোকের জন্য কেন এত দুঃখ করিতেছ?

 দেবযানী বলিলেন, “মহামুনি অঙ্গিরা যাঁহার পিতামহ, বৃহস্পতি যাঁহার পিতা, আর নিজেও যিনি এমন ধার্মিক আর বুদ্ধিমান, তিনি ত সামান্য লোক নহেন, বাবা! তাঁহার জন্য দুঃখ না করিয়া যে পারিতেছি না। কচকে আমি বড়ই ভালবাসি; তিনি মরিলে আমিও প্রাণত্যাগ করিব।”

 ইহাতে দানবদিগের উপরে শুক্রের বড়ই রাগ হইল। তখন তিনি, “অসুরেরা বারবার আমার শিষ্যকে বধ করিতেছে, আমি ইহার উচিত সাজা দিব।” এই বলিয়া ক্রোধভরে সঞ্জীবনী মন্ত্র পড়িতে পড়িতে কচকে ডাকিতে লাগিলেন।

 কচকে ডাকিতে ডাকিতে শুক্রাচার্যের মনে হইল, যেন, সেই ডাকের উত্তর তাঁহার নিজের পেটের ভিতর হইতেই আসিতেছে! তখন তিনি নিতান্ত আশ্চর্য হইয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, “সে কি, কচ, আমার পেটের ভিতরে কি করিয়া ঢুকিলে!”

 কচ বলিলেন, “অসুরেরা আমাকে আপনার সুরার সঙ্গে মিশাইয়া দিয়াছিল, আপনি আমাকে খাইয়া ফেলিয়াছেন।”

 তাহা শুনিয়া শুক্র বলিলেন, “কি সর্বনাশ! ও মা দেবযানি, এখন তোমার কচকে আমি কি করিয়া বাঁচাইব? তাহা করিতে গেলে যে আমাকেই প্রাণত্যাগ করিতে হয়! আমার পেট ছিঁড়িয়া ত তাহার বাহির হইবার উপায় নাই!”

 তাহাতে দেবযানী বলিলেন, “আপনি মরিলেও আমি বাঁচিব না, কচ মরিলেও আমি বাঁচিব না। কাজেই আপনি যাহা ভাল বুঝেন, তাহাই করুন।”

 তখন শুক্র খানিক চিন্তা করিয়া কচকে বলিলেন, “বাবা, কচ, আমি তোমাকে সঞ্জীবনী