বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৫৫৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫৫৪
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

এই পৃথিবীতে তোমার সমান আর কেহ নাই; তেমনি, পাশাখেলায় ঋতুপর্ণের মত এই পৃথিবীতে আর কেহই নাই। তুমি যদি ঘোড়া চালাইবার বিদ্যা তাহাকে শিখাইয়া দাও, তবে, তিনি নিশ্চয়ই তোমার উপর সন্তুষ্ট হইয়া তোমার সহিত বন্ধুতা করিবেন, আর খুব ভালো করিয়াই তোমাকে পাশা খেলা শিখাইবেন। সেই পাশার দ্বারা আবার তোমার রাজ্য ধন সকলই তুমি ফিরাইয়া আনিতে পারিবে, তাহাতে কোন সন্দেহ নাই তোমার মঙ্গল হউক! তুমি আর দুঃখ করিও না। যখন তোমার নিজের সেই সুন্দর রূপ আবার ফিরিয়া পাইতে ইচ্ছা হইবে, তখন এই কাপড় দুখানি পরিয়া আমাকে স্মরণ করিও।”

 এই বলিয়া কর্কোটক নলকে দুইখান কাপড় দিয়া, তাহার সম্মুখেই আকাশে মিলাইয়া গেল, আর, নল তাহাকে মনে মনে অনেক ধন্যবাদ দিয়া ঋতুপর্ণের দেশে যাত্রা করিলেন। সেখানে পৌছাইতে তাঁহার দশদিন লাগিল।

 মহারাজ ঋতুপর্ণ পাত্রমিত্র-সমেত সভায় বসিয়া আছে, এমন সময় নল তথায় উপস্থিত হইয়া বলিলেন—

 মহারাজ আমার নাম বাহুক। অশ্ব চালনায় আমার সমান লোক এই পৃথিবীতে কেহ কখনো দেখে নাই। ইহা ছাড়া অন্য সকল বিষয়েই আমার বিলক্ষণ ক্ষমতা আছে। আপনার টাকার কষ্ট হইলে তাহার উপায় করিতে পারি, রন্ধনের কাজ অতি আশ্চর্যরকম করিতে পারি। ইহা ছাড়া বিশেষ কঠিন কোন কাজ উপস্থিত হইলে, অনেক সময় তাহাও করিতে পারি। আমাকে রাখিতে আজ্ঞা হউক।”

 ঋতুপর্ণ বলিলেন, “তোমাকে অসাধারণ গুণী লোক বলিয়া বোধ হইতেছে; বিশেষত তাড়াতাড়ি ঘোড়া চালাইবার আমার বড়ই শখ। তুমি মাসে দশ হাজার মোহর বেতন পাইবে; আমার নিকট থাক। এই বার্ষ্ণেয় আর জাবল তোমার কাজকর্ম করিবে।”

 ইহার পর হইতে ঋতুপর্ণের রাজ্যে নল বিশেষ সম্মানের সহিত বাস করিতে লাগিলেন। দিনের বেলায় কাজ করিতে করিতে দময়ন্তীর সেই মুখখানি তাহার ক্রমাগতই মনে পড়িত। সন্ধ্যাকালে অবসর হইবামাত্র তিনি প্রত্যহ দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিয়া বলিতেন, “হায়! না জানি সে এখন ক্ষুধা-তৃষ্ণায় কাতর হইয়া, এই হতভাগ্যের কথা ভাবিতে ভাবিতে কোথায় পড়িয়া আছে! না জানি কত কষ্টে তাহার অন্ন জুটিতেছে!”

 নল প্রত্যহ সন্ধ্যাকালে এই কথা বলেন, জাবল প্রত্যহ আশ্চর্য হইয়া তাহা শোনে, একদিন সে জিজ্ঞাসা করিল, “বাহুক, তুমি রোজ সন্ধ্যাকালে কাহার জন্য এমন করিয়া দুঃখ কর?

 নল বলিলেন, “ভাই, এক মূর্খের সাক্ষাৎ লক্ষ্মীর মত স্ত্রী ছিল। বুদ্ধির দোষে সেই লক্ষ্মীকে ছাড়িয়া আসিয়া, এখন দারুণ দুঃখে হতভাগ্যের বুক ফাটিয়া যাইতেছে। সেই মুর্থই প্রত্যহ সেই লক্ষ্মীকে স্মরণ করিয়া এই কথা বলে।”

 এইরূপে ঋতুপর্ণের দেশে নলের দিন যাইতে লাগিল।

 নলের সারথি যখন তাহাদের ছেলেটি আর মেয়েটিকে লইয়া বিদর্ভদেশে উপস্থিত হয়, তাহার কিছুদিন পরেই মহারাজ ভীম শুনিতে পান যে, নল-দময়ন্তী রাজ্য ছাড়িয়া বনবাসী হইয়াছেন। তখন হইতেই তিনি বিশ্বাসী বুদ্ধিমান্ ব্রাহ্মণদিগকে অনেক টাকাকড়ি দিয়া দেশ বিদেশে পাঠাইয়া তাহাদিগকে খুঁজিতে আরম্ভ করিলেন। তিনি সকলকে বলিয়া দিলেন,