পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৫৬০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫৬০
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

কহিল, “মহারাজ, দময়ন্তীর শাপে, আর কর্কোটকের বিষে ইহার পূর্বেই আমার যথেষ্ট সাজা হইয়াছে। সুতরাং আপনি দয়া করিয়া আমাকে ক্ষমা করুন। আমি প্রতিজ্ঞা করিতেছি, যে আপনার নাম লইবে, কখনো তাহার নিকট যাইব না।”

 এ কথায় নল দয়া করিয়া কলিকে ছাড়িয়া দিলে, দুষ্ট তাড়াতাড়ি সেই বহেড়া গাছের ভিতরে গিয়া লুকাইল। এ-সকল কথাবার্তা নলেতে আর কলিতে এমন ভাবে হইতেছিল যে বার্ষ্ণেয় আর ঋতুপর্ণ ইহার কিছুই জানিতে পারেন নাই। কলিকেও তাঁহারা দেখিতে পান নাই। তাঁহারা খালি বহেড়া গাছটাকে শুকাইয়া যাইতে দেখিলেন, কিন্তু এ কথা বুঝিতে পারিলেন না যে, কলি তাহার ভিতরে প্রবেশ করাতেই এরূপ হইয়াছে।

 নলকে কলি ছাড়িয়া গেলেও তাঁহার চেহারা অবশ্য বাহুকের মতই ছিল। আর ঠিক বাহুকের মত করিয়াই তিনি আবার ঘোড়ার রাশ ধরিয়া রথ চালাইতে লাগিলেন। পথে এত বিলম্ব হওয়ার পরেও তিনি সন্ধ্যার পূর্বেই রথ লইয়া বিদর্ভ দেশে পৌঁছিলেন।

 দূতগণ কুণ্ডিণপুরে (বিদর্ভদিগের রাজধানী) আসিয়া সংবাদ দিল যে, রাজা ঋতুপর্ণ আসিয়াছেন। তাহাতে ভীম একটু আশ্চর্য হইয়া বলিলেন, “শীঘ্র তাঁহাকে আদরের সহিত এখানে লইয়া আইস।”

 ঋতুপর্ণও যে আশ্চর্য না হইলেন, এমন নহে। তিনি স্বয়ম্বরের সংবাদ পাইয়া আসিয়াছিলেন, কাজেই তাঁহার মনে হইয়াছিল যে, খুবই একটা ধুম-ধামের ব্যাপার দেখিতে পাইবেন। কিন্তু কুণ্ডিনপুরে পৌঁছিয়া তিনি একটা নিশানও দেখিতে বা একটা ঢোলের শব্দও শুনিতে পাইলেন না। তিনি নিতান্ত আশ্চর্য হইয়া ভাবিলেন, “তাই ত, বিষয় টা কি? স্বয়ম্বরের ত কোন আয়োজনই দেখিতে পাইতেছি না।”

 এইরূপ চিন্তা করিতে করিতে তিনি রাজা ভীমের নিকট আসিয়া উপস্থিত হইলে ভীম তাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “মহারাজ, কি নিমিত্ত আপনার শুভাগমন হইয়াছে?”

 এ কথায় তিনি ত বড়ই অপ্রস্তুত হইয়া গেলেন। স্বয়ম্বরের কোন আয়োজন নাই, একজন রাজাও আসেন নাই, একটি ব্রাহ্মণকেও দেখা যাইতেছে না; এমত অবস্থায় স্বয়ম্বরের কথা আর কি করিয়া বলেন? তাই তিনি থতমত খাইয়া মাথা চুলকাইতে চুলকাইতে বলিলেন, “মহারাজ, আপনাকে দেখিতে আসিয়াছি।”

 নিকটের এত রাজাকে ফেলিয়া, এত পরিশ্রম করিয়া শতাধিক যোজন পার হইয়া ঋতুপর্ণ আসিয়াছেন কিনা —ভীমের সহিত দেখা করিতে! ভীমের মতন বুদ্ধিমান বুড়া রাজার এ কথা বিশ্বাস হইবে কেন? তিনি নিশ্চয় বুঝিলেন, ইহাব অন্য কোন-একটা মতলব আছে। কিন্তু এ কথা তিনি তাহাকে জানিতে দিলেন না। তিনি অল্প কাল তাঁহার সহিত মিষ্ট আলাপে কাটাইয়াই যত্ন পূর্বক তাহার আহার এবং বিশ্রামের আয়োজন করাইয়া দিলেন। ঋতুপর্ণও ভাবিলেন যে, বাঁচিলাম।

 বাহুক ততক্ষণে রথখানিকে রথশালায় রাখিয়া, ঘোড়াগুলিকে দলিয়া মলিয়া সুস্থ করিয়া, রথের ভিতরেই বিশ্রামের জোগাড় করিল।

 এতক্ষণ দময়ন্তী কি করিতেছিলেন? ঋতুপর্ণ আসিয়াছেন কিনা, তাহার সংবাদ যে তিনি বারবার বিশেষ করিয়া লইয়াছিলেন তাহাতে ত কোন সন্দেহই নাই। কেহ আসিয়া তাঁহার নিকট কোনরূপ সংবাদ দিবার পূর্বেই রথের শব্দ শুনিয়া তাঁহার মনে হইতেছিল যে, নল