পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৫৭৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মহাভারতের কথা
৫৭৭

আত্রেয় নামক শিষ্যকে দিয়া ঘোড়া দুটি চাহিয়া পাঠাইলেন। কিছুকাল পরে আত্রেয় শুধু হাতে ফিরিয়া আসিয়া দুঃখের সহিত বলিলেন, “ভগবন, আমি রাজার নিকট ঘোড়া চাহিলে তিনি তাহা দিতে অস্বীকার করিলেন। বলিলেন, এমন ঘোড়া রাজারই উপযুক্ত। ব্রাহ্মণের আবার ঘোড়ার প্রয়োজন কি? আপনি আশ্রমে চলিয়া যান!”

 ইহাতে বামদেব নিজে রাজার নিকট গিয়া বলিলেন, “মহারাজ আমার ঘোড়া ফিরাইয়া দাও।”

 রাজা বলিলেন, “আপনি ঘোড়া ফিরাইয়া লইয়া কি করিবেন? উহা আমারই কাছে থাকুক।”

 মুনি বলিলেন, “আমি তোমার ভালোর জন্য বলিতেছি। ঘোড়া দুটি ফিরাইয়া দাও। নচেৎ তোমার বড়ই দুর্গতি হইবে।”

 রাজা বলিলেন, “শাস্ত্রে বলে, ব্রাহ্মণের বাহন ষাঁড়। আপনার মত লোকেরা কি শাস্ত্র অমান্য করিতে পাবেন? দুটি ষাড় কিনিয়া লউন।”

 বামদেব কহিলেন, ব্রাহ্মণের ষাঁড় বাহন ত স্বর্গে; পৃথিবীতে তোমারও ঘোড়া বাহন আমারও ঘোড়া বাহন। সুতরাং আমার ঘোড়া দুটি ফিরাইয়া দাও।”

 রাজা বলিলেন, “ষড় যদি পছন্দ না হয়, তবে বরং গাধা বা খচ্চর বা আর চারিটি ঘোড়া চডিয়া চলা ফেরা করুণ, আব মনে করুন যে, বামী ঘোড়া আপনার নহে, আমারই।”

 মুনি বলিলেন, “যদি তোমার বাঁচিয়া থাকিতে ইচ্ছা হয়, তবে শীঘ্র আমার বামী ঘোড়া ফিরাইয়া দাও।”

 রাজা বলিলেন, “মুনিঠাকুর, ঐ একটি কথা বাদে আপনি যাহা বলিবেন, আমি তাহাই করিতে রাজি আছি কিন্তু ঘোড় ফিরাইয়া দিতে পারিব না। আপনি ত শিকার করেন না, আপনার এত ভালো ঘোড়াব প্রয়োজন কি?

 এ কথা বলিতে বলিতেই বিষম বিকটাকার চারিটা রাক্ষস, চোখ ঘুরাইতে ঘুরাইতে আর দাঁত খিচাইতে খিচাইতে, ভয়ঙ্কর শূল উঠাইয়া বাজার সম্মুখে আসিয়া দাঁড়াইল। তখন তিনি চিৎকার করিয়া বলিলেন, “আমার লোকজন আমার পক্ষে থাকিলে, কখনই আমি ঘোড়া ছাড়িয়া দিব না। এই মুনি দেখিতেছি নিতান্ত পাপিষ্ঠ!" কিন্তু তাহার কান্না শেষ হইতে না হইতেই রাক্ষসেরা তাহাকে মারিয়া ফেলিল।

 শলের মৃত্যুব পব বাজা হইলেন দল। বামদেব তাহারও নিকট আসিয়া বলিলেন, “মহারাজ আমার বামী ঘোড়া ফিরাইয়া দাও।”

 ইহার উত্তরে দল বলিল, “সারথি, তীর ধনুক আন ত! আমি এই মুনিকে মারিয়া কুকুরকে খাইতে দিব।”

 তখনই ধনুর্বান আসিয়া উপস্থিত হইল। রাজা ভয়ঙ্কর এক বাণ হাতে লইয়া মুনিকে মারিতে প্রস্তুত হইলেন। তাহা দেখিয়া মুনি বলিলেন, “এ বাণে আমি মরিব না; মরিবে তোমার খোকা!”

 এ কথার সঙ্গে সঙ্গেই দল মুনিকে বাণ মারিলেন, কিন্তু সে বাণ মুনির দিকে না গিয়া, অন্তঃপুরে প্রবেশপূর্বক রাজাব দশ বৎসরের পুত্র শ্যেনজিৎকে বধ করিল!

 এই ঘটনার সংবাদ পাইবামাত্র, দল আর একটি বাণ হাতে লইয়া বলিলেন, “এই বাণে

উপেন্দ্র-৭৩