হইল।
বন্দী বলিলেন, “সকল আগুন একই জিনিস;সুর্য একটি মাত্র;ইন্দ্র একজন;যম একজন।”
অষ্টাবক্র বলিলেন, “ইন্দ্র আর অগ্নি দুই বসু, নারদ আর পর্বত দুই দেবর্ষি; অশ্বিনীকুমারেরা দুজন; রথের চাকা দুখানি; স্বামী আর স্ত্রী দুজন।”
এমনি করিয়া দুইজনে বিষম বাক্যযুদ্ধ আরম্ভ হইল! বন্দী যাহাই বলেন, অষ্টাবক্র তাহার চেয়ে বেশি করিয়া বলেন, আবার বন্দী তাহার চেয়েও বেশি করিয়া বলিলে, অষ্টাবক্র আরো বেশি করিয়া বলেন।
যে-সকল জিনিস এক-একটা করিয়া হয়, বন্দী তাহাদের নাম করিলে, অষ্টাবক্র এমন কতকগুলো জিনিসের নাম করিলেন যাহা দুই-দুইটা করিয়া হয়। ইহাতে বন্দী আর কতকগুলি জিনিসের নাম করিয়া বলিলেন, “এই-সকল জিনিস তিন-তিনটা করিয়া হয়।” অষ্টাবক্র তাহার উত্তরে এমন কতকগুলি জিনিসের কথা বলিলেন, সেগুলি চারি-চারটা করিয়া হয়।
এইরূপে চারির উত্তরে পাঁচ, পাঁচের উত্তরে ছয়, ছয়ের উত্তরে সাত, এমনি করিয়া ক্রমে এগারটায় উঠিল। তারপর অষ্টাবক্র বলিলেন, “বৎসরে বারটি মাস, জগতী ছন্দের এক এক চরণে বারটি অক্ষর; প্রাকৃত যজ্ঞ বার দিনে শেষ হয়; আদিত্যরা বার জন।”
এ কথার উত্তরে বন্দী, তেরটা করিয়া যাহা হয়, এমন দুটা জিনিসের নাম করিয়াই, “য়্যাঁ—য়্যাঁ- -’—।” করিয়া মাথা চুলকাইতে চুলকাইতে অপ্রস্তুত হইয়া গেলেন, আর অমনি অষ্টাবক্র ঐরূপ আরো অনেকগুলি জিনিসের নাম করিয়া তাঁহাকে বেকুব বানাইয়া দিলেন। তাহা দেখিয়া সেই সভাসুদ্ধ লোক হো হো শব্দের সঙ্গে হাততালি দিয়া কি আনন্দ যে করিল, তাহা কি বলিব! বন্দীকে সকলেই অত্যন্ত ভয় করিত, ঘৃণাও করিত। বার বছরের ছেলে অষ্টাবক্র এমন ভয়ঙ্কর লোককে মুহূর্তের মধ্যে হারাইয়া দেওয়াতে তাহারা যেমন আশ্চর্য হইল, তেমনি অষ্টাবক্রের উপরে সন্তুষ্টও হইল।
তখন অষ্টাবক্র বলিলেন, “এই ব্যক্তি অনেক ব্রাহ্মণকে জলে ডুবাইয়া মারিয়াছে। সুতরাং ইহাকে কিছুতেই ছাড়া হইবে না; এখনই হাত পা বাঁধিয়া ইহাকে জলে নিয়া ফেল!”
কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় এই যে, বন্দী অষ্টাবক্রের এই কথা শুনিয়া কিছু মাত্র ভয় পাইলেন না, বরং তাঁহার যেন ইহাতে খুব আনন্দই হইল। তিনি বলিলেন, “জলে ডুবিতে আমি কিছুমাত্র ভয় পাই না! আমি বরুণের পুত্র। এই জনক রাজার ন্যায় আমার পিতাও আজ বার বৎসর ধরিয়া এক যজ্ঞ করিতেছেন;সেই যজ্ঞের জন্য ভাল ভাল ব্রাহ্মণের প্রয়োজন হওয়াতে, আমি ঐ কৌশল করিয়া তাঁহাদিগকে আমার পিতার নিকট পাঠাইয়াছি। ইঁহাদের একজনেরও মৃত্যু হয় নাই। তাঁহারা আমার পিতার নিকট পরম সুখেই আছেন এবং শীঘ্রই ফিরিয়া আসিবেন। অষ্টাবক্র আমার বড়ই উপকার করিলেন; তাঁহার কৃপায়, আমি পিতার নিকট চলিয়া যাইব।”
এ কথা কেহ বিশ্বাস করিল, কেহ করিল না। কিন্তু সকলেই জিজ্ঞাসা করিতে লাগিল, “এখন বন্দীকে কি করা হইবে?”
জনক বলিলেন, “উনি যখন হারিয়াছেন, তখন অবশ্যই তাহার ফল ভোগ করিবেন, তাহাতে সন্দেহ কি?”
অষ্টাবক্র বলিলেন, “বরুণ ত জলের রাজা। এই ব্যক্তি যদি যথার্থই তাঁহার পুত্র হয়, তবে