পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৬১০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬১০
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

 তখন শঙ্খ অতিশয় দুঃখের সহিত বলিলেন, “তুমি বড়ই অন্যায় কাজ করিয়াছ! আমাকে না বলিয়া ফল খাওয়াতে চুরি করা হইয়াছে।” এখন শীঘ্র রাজার নিকট গিয়া এই পাপের শাভি চাহিয়া লও।”

 শখের কথায় তিনি তখনই রাজা সুদ্যস্নের নিকট গিয়া উপস্থিত হইলে, রাজা তাঁহাকে অতিশয় সমাদর পূর্বক বিনয়ের সহিত বলিলেন, “ভগবান, কিজন্যে আসিয়াছেন? আজ্ঞা করুন, আমাকে কি করতে হইবে?”

 লিখিত বলিলেন, “মহারাজ, আপনি আমার কথা রাখিবেন বলিয়া প্রতিজ্ঞা করিলেন, ইহার পর কিন্তু আর না বলিতে পারিবেন না। আমি দাদার অনুমতি বিনা তাঁহার আশ্রমের ফল খাইয়া চোরের কাজ করিয়াছি। আপনি শীঘ্র আমাকে ইহার শাস্তি দিন।”

 ইহাতে সুদ্যস্ন যার পর নাই আশ্চর্য হইয়া পলিলেন, “ভগবান, রাজা যেমন অপরাধীকে শান্তি দিতে পারেন, তেমনি তাহাকে ক্ষমাও করিতে পারেন। আপনি ধার্মিক লোক, আমি আপনার অপরাধ মার্জনা করিলাম। ইহা ছাড়া আপনার কি চাই বলুন?”

 লিখিত বলিলেন, “আমি আর কিছুই চাহি না, আপনি আমার অপরাধের উচিত শাস্তি দিন।”

 লিখিতের সরল সাধুতা দেখিয়া রাজার মনে তাঁহার প্রতি বড়ই শ্রদ্ধা হইল। কিন্তু তিনি অনেক চেষ্টা করিয়াও তাঁহার মন ফিরাইতে পারিলেন না। লিখিত বলিলেন, “পাপের উচিত শাস্তি না পাইলে আমার শরীর হইতে সে পাপ দূর হইবে না, সুতরাং আমাকে শাস্তি দিতেই ইতেছে।”

 তখন রাজা আর কি করেন? চোরের সাজা হাত কাটিয়া দেওয়া, সুতরাং তিনি লিখিতের হাত দুখানি কাটিয়া দিয়া তাঁহার মনের দুঃখ দূর করিলেন।

 সেই কাটা হাত লইয়া লিখিত শখের নিকট আসিয়া বলিলেন, “দাদাদেখুন রাজা আমাকে শাস্তি দিয়াছেন। এখন আপনি দয়া করিয়া আমাকে ক্ষমা করুন।”

 লিখিতের হাত দুখানির দিকে চাহিবামাত্র শঙ্খের চোখে জল আসিল, তিনি নিতান্ত স্নেহের সহিত বলিলেন, “ভাই আমি ত তোমার উপর কিছুমাত্র রাগ করি নাই। তোমার পাপ হইয়াছিল, তাই আমি তাহা দূর করাইয়া দিলাম। এখন তুমি বাহুদা নদীতে গিয়া বিধি মতে দেবতা, ঋষি এবং পিতৃগণের তর্পণ কর।”

 শঙখের কথায় লিখিত নদীতে স্নান করিয়া যেই তর্পণের চেষ্টা করিয়াছেন, অমনি তাঁহার হাত দুখানি পূর্বের ন্যায় সুস্থ হইয়া গেল। ইহাতে তিনি নিতান্ত আশ্চর্য হইয়া অবিলম্বে শখকে সেইহাত দেখাইলে, শখ বলিলেন, “লিখিত তুমি আশ্চর্য হইও না। আমার তপস্যার বলেই এরূপ হইয়াছে।”

 তখন তিনি বলিলেন, “দাদা, আপনার এমন ক্ষমতা থাকিতে আপনি আমাকে রাজার নিকট পাঠাইলেন কেন? আপনি নিজেইত আমাকে পবিত্র করিয়া দিতে পারিতেন।”।

 শঙখ বলিলেন, “ভাই, পাপের শাস্তিই হইতেছে তাহা দূর করিবার উপায়। রাজা ভিন্ন আর কাহারো সেই শান্তি দিবার অধিকার নাই। এইজন্যই আমি তোমাকে রাজার নিকট পাঠাইয়াছিলাম, রাজা তোমাকে শাস্তি দেওয়াতে, তোমারও পাপ দূর হইল, তাঁহার কর্তব্য পান হইল। সুতরাং ইহাতে দুজনেরই মঙ্গল হইয়াছে।”