পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৬২২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬২২
উপেন্দ্রকিশাের রচনাসমগ্র

না করিয়া কিছুতেই ছড়িবে না।’ তখন তিনি আর উপায় না দেখিয়া বলিলেন, “ব্রাহ্মণ কুমার, ক্ষান্ত হও! আমি তোমার প্রার্থনা পূর্ণ করিতেছি। তুমি আর তোমার পিতা আমার বরে অদ্বিতীয় পণ্ডিত হইলে, এখন ঘরে চলিয়া যাও।”

 তখন আর যবক্রীতের আনন্দ দেখে কে! তিনি হাসিতে হাসিতে পিতার নিকট আসিয়া সকল কথা জানাইলেন। কিন্তু ভরদ্বাজ এ সংবাদে বিশেষ সন্তুষ্ট না হইয়া বলিলেন, “বৎস! আমার বড়ই ভয় হইতেছে, পাছে এই ঘটনায় তোমার অহংকার হয়, আর তুমি কষ্ট পাও! দেখ, বালধি মুনির পুত্র মেধাবীও বর পাইয়া বড়ই অহঙ্কারী হইয়াছিল। তাই সে ধনুষাক্ষ মুনির কোপে মারা যায়। পূর্বে বালধির এক পুত্রের মৃত্যু হওয়াতে তিনি অমর পুত্র লাভের জন্য তপস্যা করেন। দেবতা বর দিলেন, ‘তোমার পুত্র ঐ পর্বতের ন্যায় অমর হইবে। যতদিন পর্বত আছে, ততদিন তাহার মৃত্যু নাই, পর্বত নষ্ট হইলে তোমার পুত্রও মরিবে।’ সেই অমর পুত্র হইল মেধাবী। সে নিজেকে অমর ভাবিয়া অহঙ্কার পূর্বক ঋষিদিগের অপমান করিত, একদিন সে ধনুষাক্ষের আশ্রমে গিয়া তাহার অনিষ্ট করিল। ধনুক্ষ তাহাকে ‘ভস্ম হও!’ বলিয়া শাপ দিলেন, কিন্তু সে শাপে পর্বত নষ্ট হইল না, কাজেই মেধাবীরও মৃত্যু হইল না। তাহাতে মুনি ক্রোধভরে এমন ভয়ঙ্কর বিশাল মহিষ সকলের সৃষ্টি করিলেন যে, তাহারা দেখিতে দেখিতে শিং দিয়া পর্বত চূর্ণ করিয়া ফেলিল, আর সেই পর্বত নষ্ট হইবামাত্র মেধাবীও মরিয়া গেল। তাই বলি বৎস, তুমি যেন বরলাভে অহঙ্কারী হইয়া বিপদে পড়িও না।”

 যবক্রীত বলিলেন, “বাবা আপনি কিছুমাত্র চিন্তিত হইবেন না, আমি বিশেষ সাবধান হইয়া চলিব।”

 কিন্তু হায়! মুখে বলিলেই যদি কাজে তাহা হইত, তবে আর দুঃখ কি ছিল! অল্পদিনের ভিতরেই যবক্রীতের অহংকারে মুনিগণ অস্থির হইয়া উঠিলেন। শেষে একদিন যবক্রীত রৈভ্যের আশ্রমের গিয়া পশুর ন্যায় এমন জঘন্য অত্যাচার করিলেন যে, তেমন অত্যাচার কেহই সহিয়া থাকিতে পারে না।

 তখন মহর্ষি রৈভ্য ক্রোধে অস্থিব হইয়া নিজের মাথার একটি জটা অগ্নিতে আহুতি দিবামাত্র, তাহা হইতে অতি ভীষণ এক রাক্ষস জন্মিয়া, শূল হাতে যবক্রীতকে বধ করিতে চলিল।

 যবক্রীত প্রাণের ভয়ে ব্যাকুল হইয়া ঊর্দ্ধশ্বাসে এক সরোবরের দিকে ছুটিয়া চলিলেন, কিন্তু তথায় উপস্থিত হইয়া দেখিলেন, তাহাতে জল নাই। সেখান হইতে নদীতে গেলেন, দেখিলেন, তাহাও শুকাইয়া গিয়াছে। সেখান হইতে তিনি তাঁহার পিতার অগ্নিশালার দিকে ছুটিয়া আসিলেন, কিন্তু তাহাতে প্রবেশ করিতে পারিলেন না। সেই অবসরে রাক্ষস আসিয়া শূল দ্বারা তাঁহাকে হত্যা করিল।

 ভরদ্বাজ সে সময়ে গৃহে ছিলেন না। তিনি তথায় ফিরিয়া এই দারুণ সংবাদ শ্রবণমাত্র করুণ বিলাপ করিতে করিতে রৈভ্যকে এই বলিয়া শাপ দিলেন, “আমি যেমন পুত্র শোকে কাতর হইয়া প্রাণ ত্যাগ করিতেছি সেই রূপ রৈভ্যও কিনা অপরাধে তাহার জ্যেষ্ঠ পুত্রের হাতে প্রাণ ত্যাগ করিবে, তাহাতে সন্দেহ নাই।”

 আবার তখনই নিতান্ত দুঃখের সহিত তিনি এ কথাও বলিলেন, “হায়! পুত্র শোকে