পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৬৫৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

ভিন্ন তাঁহার নিকটে আর কিছুই ছিল না; তিনি সেই দড়িগাছিই কুশলবকে দিয়া বারবার আশীৰ্বাদ করিলেন।

ত্রিপুর

দেবতাদের সঙ্গে অসুরদের ভয়ানক শক্রতা ছিল। দিনরাতই কেবল ইহাদের মারামারি চলিত, তাহাতে অনেক সময় অসুরেরাও হারিত, অনেক সময় দেবতারাও হারিতেন। দেবতারা অসুরদের জ্বালায় অস্থির থাকিতেন, আবার অসুরেরা তপস্যা করিলে তাহাদিগকে বর না দিয়াও পারিতেন না। বর দিয়া তারপর তাহার ধাক্কা সামলাইতে তাঁহাদের প্রাণান্ত হইত।

একটা অসুর ছিল তাহার নাম ময়। জাদু, মায়া, ভেলকিবাজি যত আছে, ময় তাহার সকলই জানিত, আর তাহার জোরে সময় সময় দেবতাদিগকে ভারি নাকাল করিত।

একবার যুদ্ধে হারিয়া ময় তপস্যা করিতে লাগিল; বিদ্যুন্মালী আর তারক নামে আর দুইটা অসুরও তাহার দেখাদেখি তপস্যা আরম্ভ করিল। তাহারা উপবাস করিয়া শীতে ভুগিয়া, বৃষ্টিতে ভিজিয়া এমনি আশ্চর্য তপস্যা করিল যে, ব্রহ্মা আর তাহাদের কাছে না আসিয়া থাকিতে পারিলেন না।

ব্রহ্মা বলিলেন, “বাপুসকল, আমি তোমাদের তপস্যায় বড়ই তুষ্ট হইয়াছি, এখন, কি বর লইবে বল।”

তখন ময় জোড়হাতে মিষ্ট কথায় তাহকে বিনয় করিয়া বলিল, “প্রভু, দেবতারা আমাদিগকে মারিয়া ধরিয়া তাড়াইয়া দিয়াছে, এখন আমরা কোথাও একটু থাকিবার জায়গা পাইতেছি না। দয়া করিয়া আমাকে এমন বর দিন, যাহাতে আমি একটি খুব ভালো দুর্গ প্রস্তুত করিতে পারি। সে দুর্গের ভিতরে বসিয়া থাকিলে আর কেহই যেন আমাকে কিছু করিতে না পারে।”

ব্রহ্মা বলিলেন, “একেবারে কেহই কিছু করিতে পারিবে না, এমন কি হয়?”

ময় বলিল, “তাহা যদি না হয়, তবে এই বর দিন, যে একমাত্র শিব ছাড়া আর কেহ সে দুর্গ নষ্ট করিতে পারবে না; আর শিবকেও একটিমাত্র বাণ মারিয়া সে কাজ করিতে হইবে।”

তখন ব্রহ্মা বলিলেন, “আচ্ছা তাহাই হইবে।” এই বলিয়া ব্রহ্মা চলিয়া গেলেন, ময়ও যারপরনাই খুশি হইয়া দুর্গ প্রস্তুত করিতে লাগিল।

ময় বলিল, “আমি এমন দুর্গ বানাইব যে, তাহা তিন ভাগ হইয়া তিন জায়গায় থাকিবে। তাহা হইলে আর এক বাণে তাহাকে নষ্ট করা যাইবে না। খালি, একদিন সেই তিনটি ভাগ একত্র হইবে— যেদিন চন্দ্র আর সূর্য একসঙ্গে পুষ্য নক্ষত্রে থাকিবেন। সেইদিন যদি শিব আসিয়া বাণ মারেন, তবেই আমার এই দুর্গ তিনি নষ্ট করিতে পারিবেন, নহিলে নয়।”

এমনি করিয়াই সে তাহার দুর্গ প্রস্তুত করিল। পৃথিবীর উপরে করিল একটি লোহার দুর্গ; সেটা তারকের জন্য। স্বর্গে করিল একটা রূপার দুর্গ; সেটা বিদ্যুন্মালীর জন্য। আর স্বর্গেরও উপরে একটা সোনার দুর্গ, সেটা করিল তাহার নিজের থাকিবার জন্য। এইরূপে তিনটি পুরী মিলিয়া দুর্গটি প্রস্তুত হইল, তাই তাহার নাম হইল ত্রিপুর।

তেমন দুর্গ আর কেহ কখনো দেখে নাই। যেমন বড়, তেমনি মজবুত, তেমনি সুন্দর!