পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৮৭৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৮৭৮
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র



হাতি

 আমাদের দুটো করে হাত আছে, বানরের আছে চারটি। কিন্তু আমাদের কেউ হাতি বলে না, হাতি বলে, যার একটাও হাত নেই, তাকে। আমার অনেকগুলো দাঁত পড়ে গেছে, তবু যা আছে, হাতির ততগুলি নাই। কিন্তু আমি দন্তী হতে পারলাম না, দন্তী হল হাতি।

 হাতি যা দিয়ে হাতের কাজ করে, সে হচ্ছে তার নাক। সেটি যে কি আশ্চর্য জিনিস, তা তোমরা সকলেই জান। তাকে যদি হাত বলতে রাজি হও, তবে এ কথাও মানতে হবে যে, এমন আশ্চর্য হাত আর জগতে নাই। আর হাতির দাঁতের কথা ভেবে দেখ, সে জিনিসটিও কম আশ্চর্য নয়। এই আশ্চর্যের খাতিরেই বোধহয় ঐদুটি নাম দেওয়া হয়ে থাকবে।

 এখন আমরা হাতির ঘাড়ে চেপে বেড়াই, কিন্তু আমাদের উচিত তাকে মান্য করে চলা, কেননা, এককালে সেই পৃথিবীর রাজা ছিল। তখন মানুষের জন্ম হয়নি, আর কুমিরের বাদশাই চলে গেছে। সেই সময়ে ছোট-বড় শত শত রকমের হাতি মনের আনন্দে এই পৃথিবীময় চরে বেড়াত। এখন আমরা মোটে দুরকমের হাতি দেখতে পাই, আমাদের দেশের হাতি, আর আফ্রিকার হাতি। কিন্তু সেকালে নানারকমের হাতি ছিল। কোনটার চার দাঁত, কোনোটার দুই দাঁত কোনোটার দাঁত উপরের চোয়ালে, কোনোটার দাঁত নিচের চোয়ালে; কোনোটার শুঁড় লম্বা, কোনোটার শুড় ছোট; কোনোটার রোঁয়া নেই, কোনোটা রোঁয়ায় ভরা; কোনোটার বাড়ি গরমের দেশে।

 আমাদের দেশে একরকম পুরনো হাতির হাড় পাওয়া গিয়াছে, তার একেকটা দাঁত প্রায় চৌদ্দ ফুট লম্বা ছিল। কলিকাতার জাদুঘরে গেলে এই হাতির হাড় দেখতে পাওয়া যায়। সে যে কতকালের পুরনো হাড়, সে কথা আর এখন ঠিক করে বলবার উপায় নাই। সে হাড় এখন পাথর হয়ে গেছে। পণ্ডিতেরা এ-সব হাড় পরীক্ষা করে দেখেছেন, সেগুলো ঠিক আজকালকার হাতির হাড়ের মতো নয়; সুতরাং এই হাতিগুলো ছিল একটু ভিন্ন রকমের। তাই ওদের একটা নুতন নাম দেওয়া হয়েছে—‘স্টেগোডন্‌ গণেশ’!

 আরেকটা হাতির নাম হয়েছে ডাইনোর্থীরিয়ম্। ইউরোপে এর অনেক হাড় পাওয়া গেছে;আমাদের দেশেও নাকি কিছু কিছু পাওয়া গেছে শুনেছি। এর দাঁত দুটি ছিল নীচের চোয়ালে;একটু বেঁটে গোছের আর নীচের দিকে বাঁকানো। আর একটার ছিল চারটে দাঁত; দুটো উপরে, দুটো নীচে। পণ্ডিতেরা একে বলেন ‘ম্যাস্টোডন’।

 সাইবিরিয়ার বরফের ভিতরে আরেক রকম হাতি পাওয়া গিয়াছে তার নাম হয়েছে ‘ম্যামথ্‌’। এর কিনা বরফের উপরে চলাফেরা করতে হত, কাজেই তার গায় মুনিদের দাড়ির মত লম্বা লম্বা রোঁয়া ছিল। মাঝে মাঝে এ সকল হাতির আস্ত শরীর পাওয়া যায়, তাতে এখনো মাংস চামড়া আর লোম রয়েছে:বরফের মধ্যে থাকায় কিছু পচতে পায় নি। পুরানো হাতির মধ্যে এগুলোই হচ্ছে সকলের চেয়ে নুতন। মানুষের জন্মের পরেও এরা বেঁচে ছিল। আমার বোধহয় ম্যাস্টোডনও ছিল। সাবেক মানুষের হাতের আঁকা এদের ছবি পাওয়া


আমি বড় বড় মূলোরমত দাঁতগুলোর কথাই বলছি। এছাড়া অবশ্য হাতির কসে আরও দাঁত আছে।