পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৯২৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৯২৪
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

চামড়ার উপরে উঠিয়া যেমন করিয়া পার বসিয়া থাকিবে; আর খেয়ানী দুপায় জল কাটিয়া সাতরাইবার কায়দায় তোমাকে ও-পারে লইয়া যাইবে৷

 স্কুলে যাতায়াতের প্রধান উপায় চমরী এবং ঘোড়া। চমরীগুলির স্বভাবটা বড় বুনো; কখন কি করিয়া বসে, তাহার ঠিক নাই। নাকে দড়ি না লাগাইলে তাহাকে চালানই ভার। তাহার পিঠে বসিয়া তুমি কিছুতেই নিশ্চিন্ত হইতে পার না। তোমাকে গুঁতাইবার অবসর পাইলে সে তো তাহা সন্তোষের সহিত করিবেই। আর কিছু না পারিলে অন্ততঃ তোমাকে লইয়া একটা বেখাপ্পা ছুট দিবে। পাহাড়ে উঠিবার সময় ইহারা ভারি হুঁশিয়ার; কিন্তু তাহা খালি তাহার নিজের সম্বন্ধেই—তোমার সম্বন্ধে নহে। খাদের পাশে নিয়া তোমাকে ঝাড়িয়া ফেলিবার সুযোগ পাইলে, সে অম্লানবদনে তাহা করিবে৷

 তিববতীরা পাহাড়ে উঠিতে হইলে অনেক সময় এক নুতন কায়দায় ঘোড়া চড়ে। অর্থাৎ ঘোড়ায় না চড়িয়া, তাহার লেজ ধরিয়া ঝুলিতে থাকে; ঘোড়া তাহাকে টানিয়া লইয়া যায়৷

 তিববতীদের ভূত-পেত্নীর ভয়টা বড়ই বেশী। তোমাদের মধ্যে যাহারা দার্জিলিং গিয়াছ, তাহারা নিশ্চয়ই দেখিয়াছ, ভূটিয়ারা কেমন নেকড়ের নিশান টাঙ্গায়। ঐ নেকড়ের নিশান ভূত তাড়াইবার ঔষধ! ভূত তাড়াইবার মন্ত্র তাহাতে লেখা আছে। ঘরে দরজায়, পথে ঘাটে, সকল স্থানেই ঐ সকল নিশান দেখিতে পাইবে৷

 ভূটিয়ারা তিববতের ধর্ম পালন করে। তিববতের ধর্মটা মোটামুটি বৌদ্ধ ধর্মই বটে; কিন্তু সেই বৌদ্ধ ধর্মের ভিতরে তিববতীরা তাহদের দেশের ভূত-পেত্নীগুলির জন্য অনেকখানি জায়গা করিয়া লইয়াছে। তাহদের “লামারা” এই সকল ভূত তাড়াইবার মন্ত্র লিখিয়া সাধারণ লোকের নিকট বিক্রয় করে। “লামা” বলিতে, সেই যার ছাগলের মতন গা, আর উটের মতন মুখ, যার লোমে গেঞ্জি তৈয়ার হয়—সেই জন্তুটাকে মনে করিও না। এই সকল লামা তিববতীদের প্রধান পুরোহিত এবং শাসনকর্তা। তিববতীয়েরা একেবারে স্বাধীন নহে, কোন কোন বিষয়ে চীনেদের অধীন। চীনেরা ইহাদের নিকট হইতে কর নেয়৷

 দলাই লামার নীচে আরো অনেক লামা আছেন, তাহারা পদ অনুসারে অল্প বেশী সম্মান লাভ করেন। একজন লামার ছবি দেওয়া যাইতেছে, তাহা দেখিয়া তাহার পরিচ্ছদাদির বিষয় অনেকটা বুঝিতে পরিবে। ছবিতে লামা পূজায় নিযুক্ত আছেন। এক হাতে ঘণ্টা আর এক হাতে বজ্র। সামনে একটি ডমরু পড়িয়া আছে। ডমরু একটি খুব ছোট ঢাক। আকৃতি কতকটা মোড়ার ন্যায়। আমাদের বাজিকরেরা অনেক সময় ইহা বাজায়। এই সকল জিনিস লামারা ভূত তাড়াইবার জন্যে ব্যবহার করেন৷

 লামার ডানদিকে একটা ঘটির মুখে ঝুমঝুমির ন্যায় যে জিনিস দেখিতেছ, তাহ তাঁহার “যপ-চক্র”। এইযপ-চক্র অতি অদ্ভুত জিনিস। ইহার ভিতরে ইহাদের সর্বপ্রধান মন্ত্র অনেকবার লেখা আছে। হাতলে ধরিয়া পাক দিয়া চক্র ঘুরাইতে হয়। চক্র এক পাক ঘুরিয়া আসিলে ঐ মন্ত্র হয়ত দশ হাজার বার (যতবার তাহা লেখা আছে) যপ করিবার ফল হইবে। চক্র আবার ঘুরাইবার উল্টা সোজা আছে। উল্টা ঘুরাইলে ফলও উল্টা হইবে। এ চক্রটি নিতান্তই ছোট। এমন চক্রও আছে, যে তাহা ঘুরাইতে দুজন বলিষ্ঠ লোকের দরকার। তাহার ভিতরে অনেক কাগজ ধরে, সুতরাং মন্ত্রও অনেকবার লেখা যায়, আর তাহাতে ফলও সেই পরিমাণে বেশী হয়। বড় বড় মঠে ১০ হাত ২০ হাত উচু প্রকাণ্ড যপ-চক্র খাটান থাকে। পয়সা