বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৯২৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৯২৬
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র


আমাদের দেশের একজন প্রতিভাশালী লোক বলিয়াছেন—‘কবির আমোদ, কিন্তু বিপিনের ক্লেশ, লোষ্ট্রক্ষেপী বালকের সুখে যথা ভেক৷’ তুমি তো এক কথা বলিয়া মজা করিলে; আমি বেচারা যে তাহাতে জ্বলিয়া পুড়িয়া মরিলাম। ঠাট্টা মাঝে মাঝে ভালো লাগে, কিন্তু বিদ্র‍ূপকে বড় ভয় করি। যিনি স্বভাবত কাহারো মনে ক্লেশ না দিয়া নির্দোষ কথা বলিয়া সকলকে আমোদ দেন, তিনি বড় ভালো লোক। আর যাহাদের দোষ সংশোধন করিবার ক্ষমতা নাই, কেবল বিদ্র‍ূপ করিবার জন্য অন্যের সমালোচনা করিয়া থাকে, তাহাদের সম্বন্ধে ছেলেবেলায় পড়িয়াছি, ‘খলেরা কেবল পরের দোষই অন্বেষণ করে—’৷


রাগ

 বাবা! কি রাগ গো! বাবুর মুখের উপর রাগ হইয়াছে! তাইতো মুখ ব্যাটার জ্বালায় বাবু এখন আর আরশির সম্মুখে দাঁড়াইতে পারেন না! অমন মুখ আবার বাবুলোকের থাকে?—তাই বাবু রাগ করিয়া মুখকে জব্দ করিবার নিমিত্ত মুখের নাকটা কাটিয়া ফেলিতেছেন। এবারে মুখ একাকার হইয়া যাইবেন৷

 রাগ হইলে বিচার শক্তি একটু কমিয়া যায়। আমরা কোনো ফকিরের কথা শুনিয়াছি। ফকিরের এক শত্রু ছিল, তাহাকে জব্দ করিবার জন্য নিজের ছেলেকে বলিল, “তুই আমাকে মারিয়া ওদের দরজায় ফেলিয়া রাখ৷’ ছেলে তাহাই করিল। বল দেখি জব্দ হইল কে? ছেলেবাবুদের অনেককে দেখিয়াছি মার উপর রাগ হইয়াছে, সুতরাং সেদিনের মতো আহার পরিত্যাগ করিলেন পাকা লোক হইলে পাছে মা বিরক্ত করিতে আসেন, তাই গাছে উঠিয়া বসিয়া থাকেন! এই হইল মার শাস্তি। ক্ষুধা কিন্তু রাগ বোঝে না, তাহার সময় হইলে সে হাজির হইবেই। রাগের ফল হইল ক্লেশ; ক্লেশের ফল অনুতাপ৷

 সকলেই মাঝে মাঝে অন্যায় করিয়া বলিয়া থাকেন, ‘রাগের মাথায় করিয়াছি।’ বলি, রাগের মাথাটা কি? অর্থাৎ তখন বিচারশক্তি ছিল না। ততক্ষণ আমি পাগল, সুতরাং আমার সাত খুন মাপ! খুনটা নিজের উপর দিয়াই অনেক সময় হইয়া যায়। রাগের মাথায় যত কম কাজ করা যায় ততই ভালো। যদুর ছোট বোন তাহার ছবির বই-এর একখানা পাতা ছিঁড়িয়া ফেলিয়াছিল, যদু রাগের মাথায় তৎক্ষণাৎ বইখানাকে উনুনের ভিতর রাখিয়া আসিল! এ রোগ অনেকেরই আছে৷

 রাগ হইলেই অনেকে মনে করেন যে তাঁহারা ইচ্ছা করিলে একটা কিছু করিয়া ফেলিতে পারেন, অন্যের তাতে কিছু বলিবার অধিকার নাই। রাগ হইলে অনেকে নিজেকেই কষ্ট দেন—আহা বেচারা!

 শেষে একটা কথা বলি। ভাই, রাগকে বিশ্বাস করিও না। রাগ যখন তোমার ভিতরে আসিবেন তখন খুঁজিলে দেখিবে যে বুদ্ধিটি পলায়ন করিয়াছে। রাগ আসিয়া তোমাকে তাঁহার করিয়া লইবেন। তখন আমি গাধা, গরু, ষাঁড়, মহিষ, যা কিছু হই না কেন, তোমাতে আমাতে কোনো প্রভেদ নাই৷

 তাই আজ বাবুর নাকের উপর চোট্!