বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৯৫৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিবিধ প্রবন্ধ
৯৫৩

 এরপর সমালোচক জ্যেষ্ঠতাতের কথা বলিয়া শেষ করিব। এমন বিষয় নাই। যাহা লইয়া এ ব্যক্তি নাড়াচাড়া না করিবে। এমন লোক নাই নিজের চাইতে সে যত বড় লোকই হউকনা কেন, যাহার সম্বন্ধে সে দু-চার কথা না বলিবে—নিজের যাহা নয়, বা নিজে যাহা করে নাই, সাধ্য সত্ত্বেও তাহার প্রশংসা করিবে না। যদি দায়ে পড়িয়া নেহাত দুই কথা বলিতে হয়, তবে এমন একটা খট্‌কা দিয়া রাখিয়া দিবে যে তাহাতেই তাহার নিজের কাজ সিদ্ধ হয়। এমন কিছু প্রশংসকার কাজ হইতে পারে না যাহা সে মনে করে যে সে করিতে পারে না, এতদিন যে তাহা করিয়া ফেলে নাই তাহা তাহার অনুগ্রহ। অন্যের যাহা দেখিয়া নিন্দা করিবে, সে জিনিসটা নিজের হইলে আবার তাহারই প্রশংসা করিবে৷


পুরাতন কথাঃ ১

 পরিষ্কার আকাশ হইলে ক্রমাগত চাহিয়া দেখিতে ইচ্ছা করে। চিলগুলি ঘুরিতে ঘুরিতে ঐ কত উঁচুতে উঠিতেছে। দু-একটা শকুন আবার এর চাইতেও কত উপরে উঠিয়া গিয়াছে। নীল আকাশে তাহাদিগকে এক-একটি কালো বিন্দুর মতো দেখায়। কতদিন দেখিয়াছি আকাশের একস্থানে কোথা হইতে এখটি অতি হালকা সাদা মেঘ আসিয়াছে। কোথা হইতে আসিল কিছুই বলিতে পারিতেছিনা। মুহূর্তেক আগে সেটি সেখানে ছিল না, অন্য কোনোদিক দিয়া কখনই আসে নাই—তাহা হইলে দেখিতে পাইতাম৷

 মেঘটি কোথা হইতে আসিল? আবার ঐ দেখ সে কোথায় চলিয়া গিয়াছে। ঠাকুরমা বলিয়াছিলেন, ‘পাহাড়ে গাছের কচি পাতা খাইবার জন্য অভ্রেরা দল বাঁধিয়া শূন্য পথে চলিয়া যায়, আমরা তাহাদিগকে মেঘ বলি, কিন্ত পাহাড়ের লোকেরা বল্লম হাতে লইয়া প্রচ্ছন্নভাবে তাহাদের অপেক্ষা করিতেছে। এরা যেই পাহাড়ে পৌঁছাইবে, অমনি ইহাদিগকে বধ করিয়া বাজারে বিক্রি করিতে আনিবে৷’ কিন্তু ঠাকুরমার কথা তো দেখিতেছি এখানে খাটিতেছে না৷

 মেঘেরা তবে কে? মেঘেরা অতি সূক্ষ্ম জলকণার সমষ্টি। গরম বাতাসের ভিতরে জলীয়বাষ্প মিশ্রিত থাকে, তখন আমরা তাহাকে দেখিতে পাই না। বরং শুষ্ক বায়ুর ভিতর পরিষ্কার দেখি। ঠাণ্ডা লাগিলে সূক্ষ্ম-সূক্ষ্ম জলের কণাসকল বায়ু হইতে পৃথক হইয়া পড়ে। তখন তাহাদিগকে আমরা মেঘ বলি। ইহারা যখন আরো ঘন হইয়া মাটিতে পড়িবে, তখন বৃষ্টি হইবে। নদী পুকুর ইত্যাদিতে জল দাঁড়াইবে। ঠাণ্ডা দেশে আবার কত জায়গায় এই জল জমিয়া বরফ হইবে৷

 মেঘের বেলায় যাহা হইয়াছে, পৃথিবীর বেলাও বিস্তৃত আকারে কতকটা তেমনি হইয়া গিয়াছে। অর্থাৎ আমাদের পৃথিবী এককালে বাষ্পের আকারে ছিল, ক্রমে শীতল হইয়া তরল হয়, শেষটা তাহার বর্তমান কঠিনত্ব প্রাপ্ত হইয়াছে। এখনো পৃথিবীর সমস্তটা কঠিন হয় নাই। আগ্নেয়গিরি হইতে মাঝে মাঝে অতিশয় গরম গলানো জিনিস সব বাহির হয়, এ কথা তোমরা জান। ঐগুলি পৃথিবীর ভিতরকার জিনিস। ঘি জ্বাল দিয়া রাখিলে যেমন প্রথমে তাহার উপরে খানিকটা জমে, কিন্তু ভিতরটা তরল অবস্থায়ই থাকে, পৃথিবীরও এখন সেই

উপেন্দ্র—১২০