পাতা:ঋষি রবীন্দ্রনাথ - অমলেন্দু দাশগুপ্ত (১৯৫৪).pdf/১০২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৯৮
ঋষি রবীন্দ্রনাথ

 জিজ্ঞাসিত প্রশ্নটির উত্তর রবীন্দ্রনাথ নিজেই দিয়াছেন—

আপনারে তুমি দেখিছ মধুর রসে
আমার মাঝরে নিজেরে করিয়া দান॥

 বৃহদারণ্যক উপনিষদের মধুকান্ডে প্রথম অধ্যায়ে চতুর্থ ব্রাহ্মণে বলা হইয়াছে—

 “অগ্রে এই জগৎ পুরুষাকার আত্মা (বা বিরাট)রূপেই ছিলেন—আত্মৈবেদগ্র আসীৎ পুরুষবিধ।” সেই একাকী ভয় পাইলেন, ‘এইজন্য (আজও) লোকে একাকী থাকিতে ভীত হয়॥’

 তারপর সেই প্রথম পুরুষ বা বিরাট-পুরুষ সম্বন্ধে বলা হইয়াছে, ‘সবে নৈব রেমে তস্মাদেকাকী ন রমতে স দ্বিতীয়মৈচ্ছৎ’—তিনি মোটেই রতি বা আনন্দ লাভ করিলেন না। এইজন্য (আজও) কেহ একাকী থাকিলে সুখী হয় না। তিনি সঙ্গীর অভিলাষ করিলেন॥

 কেন? রতি বা আনন্দলাভ করিবার জন্য। পরম একাকী আপন একাকিত্বে নিজের আনন্দ-সঙ্গী পাইবার জন্য সৃষ্টি করিয়া সৃষ্টিতে জীবহৃদয়ে অনুপ্রবিষ্ট, ইহাই হইল উপনিষদের উপদেশ।

 উপনিষদের এই সত্য রবীন্দ্রনাথের ব্যক্তিগত জীবনে ও উপলব্ধিতে কতখানি সত্য প্রকাশ লাভ করিয়াছে বলার ভঙ্গী ও ভাবেই তাহা অভিব্যক্ত। উপনিষদ শুধু একটি সংবাদসূত্রে দিয়াছেন, একাকীরই এই সৃষ্টি। আর রবীন্দ্রনাথের জীবনে সেই সংবাদটিই রূপান্তরিত হইয়া সংবাদের বাচকের মধুময় মূর্তি পরিগ্রহ করিয়াছে—

আপনারে তুমি দেখিছ মধুর রসে
আমার মাঝারে নিজেরে করিয়া দান।

 একটা বিষয় বিশেষভাবে লক্ষ্য করিবার যে, গান-জানা এবং গান-গাওয়া এই দুইয়ের মধ্যে যে পার্থক্য, উপনিষদের উপদেশ এবং রবীন্দ্রনাথের উপলব্ধিতেও সেই পার্থক্য। এটুকু মনে রাখিলে গীতাঞ্জলির উদ্ধৃত অংশ কয়টির ব্যাখ্যা বা ভাষ্য হইতে অব্যাহতি পাওয়া যাইবে।

 আরও একটি কথা, তত্ত্বে ও রসে যে পার্থক্য, উপনিষদের উপদেশে ও রবীন্দ্রনাথের উপলব্ধিতে সে পার্থক্য বিদ্যমান। ব্রহ্মকে বলা হইয়াছে ‘রসো বৈ সঃ— তিনি রস-স্বরূপ’ এবং তাঁহাকে পাইলে ‘আনন্দী’ হাওয়া যায়। এই ‘রসো বৈ সঃ—এর