পাতা:ঋষি রবীন্দ্রনাথ - অমলেন্দু দাশগুপ্ত (১৯৫৪).pdf/১০৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১০০
ঋষি রবীন্দ্রনাথ

কৃপা করে রেখেছ নাথ,
অনেক ব্যবধান—

 বিরহ ব্যবধানের সুরটি এখানে বেশ স্পষ্ট এবং এই ব্যবধানকে প্রেমমুগ্ধ হৃদয় তাঁহার কৃপা বলিয়াই গণ্য করিয়াছে, দেখা যায়। এখন আর একটি গান লওয়া যাক—

আমার খেলা যখন ছিল তোমার সনে
তখন কে তুমি তা কে জানত।
তখন ছিল না ভয়, ছিল না লাজ মনে,
জীবন বহে যেত অশান্ত।

 তিনি ছিলেন খেলার সাথী, সখা, বন্ধু, কাজেই লজ্জা-ভয়-চিন্তা-জিজ্ঞাসা ইত্যাদির কিছুমাত্র অবকাশ সেখানে ছিল না। কিন্তু কে এই খেলার সাথী? কে এই সখা?—

হঠাৎ খেলার শেষে কী দেখি ছবি—
স্তব্ধ আকাশ, নীরব শশী রবি,
তোমার চরণ পানে নয়ন করি নত
ভুবন দাঁড়িয়ে আছে একান্ত॥

 যাঁহার সঙ্গে ব্যবধান ছিল প্রেমেরই ব্যাখ্যা, তিনিই হইলেন একেবারে খেলার সাথী, এখন খেলা শেষে দেখা গেল—তিনিই বিশ্বভুবনের ঈশান, বিধাতা।


 এই গানটিতে উপনিষদের ঋষির এক শান্ত মূর্তি প্রতিফলিত দেখা যাইবে—

প্রেমে প্রাণে গানে গন্ধে আলোকে পুলকে
প্লাবিত করিয়া নিখিল দ্যুলোক-ভুলোকে
তোমার অকল অমৃত পড়িছে ঝরিয়া।

 ব্যাখ্যার কোন অবকাশ নাই, প্রয়োজনও করে না। ইহার পরে যে কথাটি তিনি বলিয়াছেন, উপনিষদের কম ঋষির কণ্ঠেই এমন বাণী ধ্বনিত হইয়াছে—

দিকে দিকে টুটিয়া সকল বন্ধ
মুরতি ধরিয়া জাগিয়া উঠে আনন্দ;
জীবন উঠিল নিবিড় সুধায় ভরিয়া॥

 উপনিষদের ঋষি বলিয়াছেন যে, এই সৃষ্টি আনন্দ হইতে আসিয়াছে, আনন্দে বিধৃত এবং আনন্দেই পরিণামে অবসিত। কিন্তু সৃষ্টিকে একমাত্র মহর্ষি