পাতা:ঋষি রবীন্দ্রনাথ - অমলেন্দু দাশগুপ্ত (১৯৫৪).pdf/১১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১০৮
ঋষি রবীন্দ্রনাথ

যে, রবীন্দ্রনাথের আচরণ যদি ধর্ম ও নীতি-বিরদ্ধে বলিয়া কেহ দেখাইতেও পারেন, তথাপি ‘রবীন্দ্রনাথ ব্রহ্মজ্ঞ পুরুষ’ এই সত্যের কোন ইতরবিশেষ ঘটিবে না।

 রবীন্দ্রনাথের ব্যক্তিগত জীবনযাত্রা ব্রহ্মজ্ঞ পুরুষের জীবনযাত্রার সঙ্গে মিলে না, এই অর্থহীন প্রশ্নটিকে স্বীকার করিয়াই এতক্ষণ আলোচনা করা গিয়াছে। কিন্তু ব্রহ্মজ্ঞ পুরুষের মধ্যেও শ্রেণীভেদ আছে এবং ‘ব্রহ্মবিদ্ বরিষ্ঠ’ বলিয়া উল্লেখ ও প্রয়োগ উপনিষদেই রহিয়াছে।

 কাজেই, প্রশ্নটিকে ঠিকমত আকার দিলে আলোচনার একটা অবকাশ থাকে। আচরণ দেখিয়া ব্রহ্মজ্ঞ চিনিবার চেষ্টা ছাড়িয়া দিয়া প্রশ্ন হওয়া উচিত—ব্রহ্মজ্ঞদের জীবনযাত্রা বা আচরণে এমন পার্থক্য কেন?

 রবীন্দ্রনাথের প্রসঙ্গে এই প্রশ্ন যতটা প্রযোজ্য হইতে পারে, আলোচনার ক্ষেত্রের পরিধি সেই অবধি সীমাবদ্ধ রাখিয়া একটু অগ্রসর হওয়া যাইতেছে।

 ধরিয়া লওয়া যাইতেছে যে, রবীন্দ্রনাথকেও সাধারণ মানুষের ন্যায় আসক্ত হইতে, আচ্ছন্ন হইতে এবং বিচলিত হইতে দেখা গিয়াছে। অর্থাৎ, রবীন্দ্রনাথের আচরণে জ্ঞান, বৈরাগ্য ও শান্তির বিলক্ষণ অভাব প্রায়শ বা কখনো কখনো দেখা গিয়াছে, ইহা সত্য বলিয়াই আমরা ধরিয়া লইতেছি।

 ইহা মানিয়া লইলে তারপরও কি বলা চলে, রবীন্দ্রনাথ ব্রহ্মজ্ঞ ঋষি? আমাদের উত্তর, হ্যাঁ, ইহা মানিয়া লইলেও দ্বিধাহীন অকুণ্ঠভাবেই বলা চলে— রবীন্দ্রনাথ ব্রহ্মজ্ঞ পুরুষ, রবীন্দ্রনাথ ঋষি। কেন চলে, সেই আলোচনাই সংক্ষেপে শেষ করিয়া ‘ঋষি রবীন্দ্রনাথ’ প্রবন্ধের উপর যবনিকাপাত করা যাইতেছে।


 ‘ব্রহ্মসূত্রে’ ব্রহ্মবিদ্যার ফল সম্বন্ধে ভগবান বেদব্যাস প্রথমে একটি সূত্রে বলিয়াছেন, “ঐহিকমপ্রস্তুতে প্রতিবন্ধে, তদ্দর্শর্নাৎ”—প্রতিবন্ধ না থাকিলে এই জন্মেই বিদ্যা (ব্রহ্মজ্ঞান) লাভ করা যায়, প্রতিবন্ধ থাকিলে পরজন্মে প্রতিবন্ধ দূর হইলে লাভ হয়।

 ইহার পরের সূত্রটিতে ব্রহ্মবিদ্যাপ্রাপ্ত ব্রহ্মজ্ঞ পুরুষ সম্বন্ধে বলা হইয়াছে, “মুক্তি ফলানিয়ম-স্তদবস্থাবধৃতে স্তদবস্থাবধৃতেঃ”—তদ্রূপ মুক্তিরূপ ফল যে এই জন্মান্তেই লাভ হইবে, তাহারও নিয়ম নাই।

 উপনিষদে বলা হইয়াছে যে, ব্রহ্মজ্ঞ পুরুষ দেহান্তে মুক্তি বা মোক্ষ লাভ করেন এবং তাঁহার আর পুনরাবৃত্তি অর্থাৎ পুনর্জন্ম ঘটে না। কিন্তু এই সূত্রটিতে