পাতা:ঋষি রবীন্দ্রনাথ - অমলেন্দু দাশগুপ্ত (১৯৫৪).pdf/৫৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

( ১০ )

 অতঃপর রবীন্দ্রনাথের আলোচ্য উপলব্ধির তৃতীয়-দর্শনটিকে গ্রহণ করা যাইতেছে। এই তৃতীয়-দর্শনে তিনি ঘোষণা করিয়াছেন—

“ক্ষণে ক্ষণে দেখিয়াছি দেহের ভেদিয়া যবনিকা
অনির্বাণ দীপ্তিময়ী শিখা ॥”

 পূর্বের দুইটি দর্শন হইতে এই তৃতীয়-দর্শনটি অপেক্ষাকৃত একটু দুর্বোধ্য মনে হইবে। প্রথম দুইটি দর্শনে যে তিনি ব্রহ্মের কথাই বলিয়াছেন, ইহা বুঝিতে কোন কষ্ট হয় না। কারণ সেখানে রবীন্দ্রনাথ স্পষ্ট ও আক্ষরিকভাবে উপনিষদের ব্রহ্মবাচক ‘আণোরণীয়ান মহতো মহীয়ান’ এবং ‘ভূমা’ শব্দই প্রয়োগ করিয়াছেন।

 কিন্তু ‘দীপ্তিময়ী শিখা’ বলিতে স্বভাবতই ব্রহ্মকে বুঝায় না, বুঝায় উজ্জ্বল অগ্নিশিখাকে। কাজেই এই তৃতীয় দর্শনে রবীন্দ্রনাথ যে বস্তুত ব্রহ্মকেই দেখিয়াছেন, ইহা বুঝানো এবং প্রমাণ করা একটু কষ্টকর হইবে বলিয়াই মনে হয়। কষ্টসাধ্য হইলেও চেষ্টা করিতে হইবে।

 ন্যায়শাস্ত্রে ‘ধূমাৎ বহ্নিমান পর্বত’ অনুমান করিবার বিধি আছে এবং সে–অনুমান প্রমাণ বলিয়াই পণ্ডিত-সমাজে স্বীকৃত হইয়া থাকে। তেমনি দেহের তাপ দেখিয়া দেহমধ্যস্থ অগ্নির অবস্থিতিও আমরা অনুমান এবং সত্য বলিয়া গ্রহণ করিতে পারি। আমাদের শরীরের মধ্যে যে আগুন আছে, ‘জঠরাগ্নি’, ‘মন্দাগ্নি’ ইত্যাদি প্রয়োগ হইতেও প্রমাণিত হয়।

 দেহস্থ এই অগ্নিই ব্রহ্ম কি না, তাহা পরে বিচার্য। আপাতত এইটুকু