পাতা:ঋষি রবীন্দ্রনাথ - অমলেন্দু দাশগুপ্ত (১৯৫৪).pdf/৮৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৮০
ঋষি রবীন্দ্রনাথ

(১৬)

 রবীন্দ্রনাথ ব্রহ্ম‌জ্ঞ কি না, এই প্রশ্নটি আমরা গ্রহণ করিয়াছিলাম। রবীন্দ্রনাথের ব্যক্তিগত উপলব্ধি এবং শাস্ত্রবাক্য, প্রশ্নটির বিচারের জন্য ইহারই শুধু আশ্রয় আমরা এতাবৎ একান্তভাবে গ্রহণ করিয়াছি। কিন্তু কবি রবীন্দ্রনাথকে কিছুমাত্র গ্রহণ করি নাই। অর্থাৎ রবীন্দ্রনাথের রচনাবলীকে আলোচ্যক্ষেত্রে কখনও প্রমাণ হিসাবে গ্রহণ করা হয় নাই।

 রবীন্দ্রনাথ কি ব্রহ্মজ্ঞপুরুষ—এই প্রশ্নের বিচারে তাঁহার সাহিত্য সৃষ্টিকে প্রমাণরূপে উপস্থাপিত করা চলে কি না, ইহাই এখন আমাদের জিজ্ঞাস্য। আমরা মনে করি যে, আলোচ্য বিষয়ে রবীন্দ্র রচনাবলী হইতে প্রমাণ সংগ্রহ করা মোটেই অযৌক্তিক বা অসঙ্গত নহে।

 রবীন্দ্রনাথকে বলা হয় ঋষিকবি, যেমন অতীতে জনককে বলা হইত রাজর্ষি। রাজকুলে যিনি ঋষি, তিনিই রাজর্ষি। তেমনি কবিকুলে যিনি ঋষি কিম্বা ঋষিকুলে যিনি কবি, তিনিই ঋষিকবি। যে কবি ঋষি হইয়াছেন, কিম্বা যে ঋষি কবি হইয়াছেন, ইহার যে কোন একটি অর্থই রবীন্দ্রনাথের ‘ঋষিকবি’ সংজ্ঞা সম্পর্কে গ্রহণ করা চলিতে পারে।

 বস্তুত রবীন্দ্রনাথের ক্ষেত্রে ঋষি এবং কবি একই অর্থবাচক। উপনিষদে ঋষি অর্থে কবি শব্দের বহু প্রয়োগ রহিয়াছে দেখা যায়। রবীন্দ্রনাথের কবি-পরিচয় তাঁহার ঋষিপরিচয়েরই একটা দিক বা প্রকাশ বলিয়াই আমরা মনে করি। ঋষি বলিতে রবীন্দ্রনাথকে পাই—দ্রষ্টারূপে এবং কবি বলিতে সেই দ্রষ্টাকেই পাই—স্রষ্টারূপে। আর দ্রষ্টা এবং স্রষ্টা যে একেরই দুই রূপ, ইহা উপনিষদে স্বীকৃত।