পাতা:ঋষি রবীন্দ্রনাথ - অমলেন্দু দাশগুপ্ত (১৯৫৪).pdf/৮৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৮২
ঋষি রবীন্দ্রনাথ

হইয়াছে। কবির মধ্যে অর্থাৎ কবির রচনায় একজন দার্শনিকই আত্মপ্রকাশ করিয়াছেন, ইহাই এতদ্বারা প্রমাণিত হয়। আর এখানেই আমাদের বক্তব্য যে, রবীন্দ্রনাথ ‘দার্শনিক’ নহেন, তিনি হইলেন—‘দ্রষ্টা’।

 এখন আমাদের জিজ্ঞাস্য যে, রবীন্দ্রনাথ দার্শনিক, ইহা প্রমাণ করিবার জন্য যদি তাঁহার রচনাবলীকে সাক্ষ্য হিসাবে গ্রহণ করা যাইতে পারে, তবে রবীন্দ্রনাথ দ্রষ্টা, রবীন্দ্রনাথ ব্রহ্মজ্ঞ ঋষি, এই কথা প্রমাণের জন্য তাঁহার রচনাবলীর সাহায্য কেন লওয়া যাইবে না? আমাদের বিচার্য বিষয়ে আমরা যদি রবীন্দ্র রচনাবলী হইতে সাক্ষ্য, প্রমাণ ইত্যাদি উদ্ধৃত করি, তাহা আদৌ অযৌক্তিক বা অসঙ্গত বলিয়া কদাচ বিবেচিত হইতে পারে কি?

 রবীন্দ্রনাথের প্রথম আধ্যাত্মিক উপলব্ধিটির বিশ্লেষণ করিতে গিয়া আমরা পূর্বেই দেখিয়াছি যে, উক্ত উপলব্ধিটি তাঁহার কবি-জীবনে কি গভীর প্রভাব বিস্তার করিয়াছে। রবীন্দ্রনাথের সমগ্র সাহিত্য সাধনা ও সৃষ্টিরই মূলে থাকিয়া এই প্রভাবটি সক্রিয় রহিয়াছে, ইহাই সেখানে দেখানো হইয়াছে। সেই প্রসঙ্গেই আমরা রবীন্দ্রনাথের সাহিত্য সৃষ্টিতে ‘জীবনদেবতা’র উল্লেখ করিয়াছিলাম।

 রবীন্দ্রনাথ ব্রহ্মজ্ঞ, ইহা প্রমাণ করিবার জন্য আমরা রবীন্দ্র-রচনাবলীর আদৌ কোন সাহায্য গ্রহণ করিব কি না, ইহা অবশ্য স্বতন্ত্র কথা। আমাদের জিজ্ঞাস্য শুধু এই—বিচার্য বিষয়ে রবীন্দ্র-রচনাবলীকে সাক্ষ্য হিসাবে গ্রহণ করা চলে কি না? আমরা যতটকু আলোচনা করিয়াছি, তাহাতে এই অভিমতই অভিব্যক্ত হইয়াছে, হাঁ, এই বিষয়ে তাঁহার রচনাবলী প্রমাণ ও সাক্ষ্য হিসাবে উপস্থাপিত করা চলে এবং উচিতও।

 নিজের সাহিত্য-সাধনা এবং সৃষ্টিকে রবীন্দ্রনাথ স্বয়ং কি দৃষ্টিতে দেখিয়া থাকেন, সে আলোচনা এই প্রসঙ্গে স্বভাবতই আসিয়া পড়িবে। এই বিষয়ে রবীন্দ্রনাথের নিজস্ব অভিমতেরই গুরুত্ব সর্বাধিক। কাজেই, তাঁহার ঋষি চরিত্রের উপর তাঁহার কাব্যসৃষ্টি কতটা আলোকপাত করে জানিতে হইলে নিজের সৃষ্টিকে ঋষিকবি কি দৃষ্টিতে দেখিয়া থাকেন, সে আলোচনা অপরিহার্য।

 অতঃপর সংক্ষেপে সে আলোচনাই করা যাইতেছে। ইহার পরে ‘রবীন্দ্রনাথ ব্রহ্মজ্ঞ’—ইহা প্রমাণের জন্য রবীন্দ্র রচনাবলী হইতে সাক্ষ্য গ্রহণ করা হইবে কি না, সে সম্বন্ধে মনঃস্থির করার সুযোগ আমরা যথাসময়ে পাইব।


 রবীন্দ্রনাথের ‘আমার ধর্ম’ নামক একটি প্রবন্ধ ‘সবুজপত্র’ নামক মাসিক পত্রে