পাতা:ঋষি রবীন্দ্রনাথ - অমলেন্দু দাশগুপ্ত (১৯৫৪).pdf/৮৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ঋষি রবীন্দ্রনাথ
৮৫

(১৭)

 গীতায় আছে, সকলেই কর্ম করে, কারণ কর্ম না করিয়া উপায় নাই, কর্ম করিতে জীব বাধ্য। কিন্তু কর্ম করিলেই কর্মযোগী হয় না, কর্মী আর কর্মযোগী এক নহে। কর্ম করিতে আমরা বাধ্য, তাই কর্ম আমাদের বন্ধন। কিন্তু কর্মযোগীর কর্মবন্ধন বলিয়া কিছু নাই, তাহার কর্ম মুক্তের সহজ কর্ম।

 গীতা সিদ্ধ কর্মযোগীর বিশেষ তিনটি লক্ষণের কথা বলিয়াছেন। প্রথম লক্ষণটি হইল এই যে, কর্মযোগীর কর্মের ফলাকাঙ্ক্ষা নাই, অর্থাৎ সে আসক্তিশূন্য

 দ্বিতীয় লক্ষণ, কর্মযোগী নিজেকে কর্মের কর্তা মনে করেন না; অর্থাৎ তাঁহার কর্তৃত্বাভিমান নাই। চাকর যেমন কর্ম করিয়াও কর্তা নয়, কর্মযোগীও তাই।

 আর তৃতীয় লক্ষণটি হইল এই যে, কর্মযোগীর সকল কর্ম ঈশ্বরে অর্পিত বা নিবেদিত।

 এই তিনটির যে কোন একটি লক্ষণ যাহার দেখা যায়, সে কর্ম করিয়াও কর্মী নয়, সে কর্মযোগী এবং তাহার কর্ম আর দশজনের মত কর্ম মাত্র নহে, তাহা কর্মযোগ। আর এই কর্মযোগেই নিখিল সৃষ্টির মহাকর্মের মহানায়কের সঙ্গে সে যোগযুক্ত, সৃষ্টিতে সে ঈশ্বরের কর্মসঙ্গী বা লীলাসঙ্গী। এই কর্মযোগীকেই গীতা বলিয়াছেন—মুক্ত এবং ঈশ্বরপ্রাপ্ত পুরষ।

 এখন রবীন্দ্রনাথের কর্ম তথা সাহিত্যসাধনা ও সৃষ্টির ক্ষেত্রে কর্মযোগের বা যোগীর এই লক্ষণটি কত দূর প্রযোজ্য দেখা যাইতেছে। অর্থাৎ, কবি রবীন্দ্রনাথ কর্মী না কর্মযোগী, তাহাই এখন দ্রষ্টব্য।