পাতা:একঘরে - দ্বিজেন্দ্রলাল রায়.pdf/১৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
একঘরে
১৩

পাই না।” বলা বাহুল্য যে কুলগুরু মহারাজের প্রতি তাহার স্নেহাধিক্যে, বা নিজের দয়াগুণে, অথবা টিকীর মাহাত্ম্যে, তাঁহার সে ভীতি প্রদৰ্শন কার্য্যে পরিণত করেন নাই।

 জানি মহাশয়, এই ত আপনাদের সমাজ, টাকা বা টিকী থাকিলে, মিছা কথা কহিলে, বা গোঁফ কামাইলে, সাত খুন মাফ। মহাশয় আমার দুরদৃষ্ট যে টাকা নাই, টিকী নাই, চন্দনের ফোঁটা নাই, কোশাকুশী নাই, ও গোঁফ আছে।

*
*
*
*

 আপনি বলিয়াছেন যে, “তোমাকে জাতে উঠাইবার জন্য আমরা বিশেষ চেষ্টিত আছি। মহাশয় মাফ করিবেন, কিন্তু আপনার প্রথম কথাতেই আমার আপত্তি আছে। “জাতি” একথা আর হিন্দুর প্রতি ব্যবহার্য্য নহে। একদিন হিন্দু জাতি ছিল বটে; কিন্তু এখন হিন্দুকে জাতি বলিলে আর্য প্রয়োগ হয়। কাণা ছেলেকে ‘পদ্মলোচন’ বলিয়া ডাকিলে অন্য লোকের যে নিদারুণ কষ্ট হয়, কেহ কাককে ‘কলকণ্ঠ’ বলিয়া ডাকিলে অন্যের যে দুঃখ হয়, পেয়াদা শ্বশুরালয়ে যাইব বলিলে যেমন তাহাকে মারিতে ইচ্ছা করে, কেহ তাঁর ঘোরতর কৃষ্ণবর্ণা স্ত্রীকে ‘সুন্দরি’ বলিয়া ডাকিলে অপরের যে যাতনা হয়, হিন্দুকে আজ জাতি বলিলে আমার তেমনি শরীরের বেদনা হয় ও গারে জ্বর আসে।

 আর ‘উঠা’ এ কথাটিও এখানে অস্থান-প্রযুক্ত। উঠা শব্দে নীচু হইতে উঁচু যাওয়া বুঝায়, উঁচু হইতে নীচু যাওয়া বুঝায় না; আর উঠার এরূপ অর্থও বোধ হয় পণ্ডিতেরা দেন নাই। ইহার মাতৃশব্দ “উত্থা” এর নীচু হইতে উচু যাওয়া এইরূপ অর্থই প্রতিপন্ন হয়। অতএব এস্থলে (বিলেতফেরতাদিগের প্রতি প্রয়োগ করিবার সময়) উঠা স্থলে ‘নামা’ বলিবেন। ‘পালে মেশা’ বলিলেও আমার আপত্তি নাই।