পাতা:এখন যাঁদের দেখছি - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

এক

জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ী

 কলম নিয়ে বসেছিলাম বর্তমানের ছবি আঁকতে। কিন্তু কাগজে কালির আঁচড় পড়বার আগেই দেখি, মনের পটে স্মৃতিদেবী নতুন ক'রে আঁকতে সুরু ক'রে দিয়েছেন একখানি পুরাতন ছবি। তবে পুরাতন হ'লেও সে ছবি চিরনূতন।

 ব্যক্তিত্বের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে, মনুষ্যবিশেষের স্বাতন্ত্র্য। এক একখানি বাড়ীর ভিতরেও থাকে এমনি বিশেষ বিশেষ স্বাতন্ত্র্য। সহরে দেখতে পাওয়া যায় হাজার হাজার বাড়ী এবং তাদের প্রত্যেকেরই ভিতরে থাকে কিছু না কিছু পার্থক্য। এই পার্থক্য এতই সাধারণ যে, তার মধ্যে বিশেষ কোন স্বাতন্ত্র্য উপলব্ধি করা যায় না।

 কিন্তু এক একখানি বাড়ী অসাধারণ হয়ে ওঠে এক একজন মহামনা মহামানুষকে অঙ্কে ধারণ করে। সেই মনস্বীদের ব্যক্তিত্বের স্মৃতি বহন ক'রে ইট-কাঠ-পাথর দিয়ে গড়া বাড়ীগুলিও হয় স্বাতন্ত্র্যে অনন্যসাধারণ। হয় যদি তা পর্ণকুটীর, সবাই রাজপ্রাসাদ ফেলে তাকে দেখতে ছোটে বিপুল আগ্রহে। এই জন্যেই দক্ষিণেশ্বর কালিবাড়ী, বেলুড় মঠ এবং মাইকেল, বঙ্কিমচন্দ্র ও সুভাষচন্দ্র প্রভৃতির বাসভবন আকৃষ্ট করে বৃহতী জনতাকে।

 জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ী!

 উত্তরে দক্ষিণে পশ্চিমে তিনটি সংকীর্ণ, নোংরা গলি এবং পূর্বদিকে একটি গণ্ডগোল-ভরা বাজার। এরই মাঝখানে অভিজাত পল্লী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েও জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ী নিজের জন্যে রচনা ক'রে নিয়েছে অপূর্ব এক স্বাতন্ত্র্য্য, বিচিত্র এক প্রতিবেশ। আজ তার নূতন গৌরব করবার কিছুই নেই, কিন্তু তার প্রভূত পূর্বগৌরব তাকে এমন গরীয়ান, এমন অতুলনীয় ক'রে রেখেছে যে,