বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:এখন যাঁদের দেখছি - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/২২৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
এখন যাঁদের দেখছি

আমাদের দল বৃহত্তর হয়ে উঠতে লাগল। কারণ “যমুনা”র মজলিসে ওঠা-বসা করতেন স্বর্গীয় সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত, স্বর্গীয় মণিলাল গঙ্গোপাধ্যায়, স্বর্গীয় রসময় লাহা, স্বর্গীয় রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়, স্বর্গীয় মোহিতলাল মজুমদার, শ্রীউপেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায়শ্রীসৌরীন্দ্রমোহন মুখোপাধ্যায় প্রমুখ বহু বিখ্যাত সাহিত্যিক। তারপর নৈবেদ্যের উপরে চূড়া সন্দেশের মত “যমুনা”র আসরে এসে আসীন হলেন শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। কিছুকাল পরে আমাদের দল পুষ্ট হয়ে উঠল অধিকতর। দলের নূতন বৈঠক বসতে লাগল “ভারতী” কার্যালয়ে। আগেকার কেহই দলছাড়া তো হলেনই না, উপরন্তু প্রমথ চৌধুরী, দীনেশচন্দ্র সেন, চারুচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়, দ্বিজেন্দ্রনারায়ণ বাগচী, সুকুমার রায়চৌধুরী, সুরেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়, কিরণধন চট্টোপাধ্যায়, অজিতকুমার চক্রবর্তী ও শিল্পাচার্য অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রভৃতি স্বর্গীয় মনীষিগণও শোভাবর্ধন করতেন আমাদের দলের মধ্যে। আসতেন ভাষাতত্ত্ববিদ্ শ্রীসুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়, কবি শ্রীনরেন্দ্র দেব ও নজরুল ইসলাম। আসতেন চিত্রশিল্পী শ্রীঅসিতকুমার হালদারশ্রীদেবীপ্রসাদ রায়চৌধুরী এবং নাট্যাচার্য শ্রীশিশিরকুমার ভাদুড়ী এবং স্বর্গীয় নাট্যশিল্পী রাধিকানন্দ মুখোপাধ্যায় ও নির্মলেন্দু লাহিড়ী। মোট কথা, তখন আমাদের দলের মত শক্তিশালী বৃহৎ ও বিখ্যাত দল বাংলা দেশের আর কোথাও ছিল না এবং তারপর আজ পর্যন্ত তেমন দল আর গঠিত হয়নি। চুম্বকের দিকে যেমন লৌহের আকর্ষণ অবশ্যম্ভাবী, আমাদের সেই দলের দিকে তেমনি আকৃষ্ট হ’ত সর্বশ্রেণীর সাহিত্যিক ও শিল্পীর দৃষ্টি। সেখানে আসন লাভ করবার জন্যে সকলেই আগ্রহ প্রকাশ করতেন, কিন্তু সে সৌভাগ্য লাভের সুযোগ পেতেন না সকলেই।

 যশস্বী সাহিত্যিক শ্রীনৃপেন্দ্রকৃষ্ণ চট্টোপাধ্যায় বয়সে যখন অতি তরুণ ছিলেন, তাঁর তখনকার মনের কথা তিনি এইভাবে ব্যক্ত করেছেনঃ “(ভারতীর) ইলেকট্রিক চায়ের কেটলীর চারিদিকে যে সাহিত্য-পরিবার গড়িয়া উঠে, বাংলা সাহিত্যের জীবনে তাহা একটি নূতন সাহিত্যিক অনুভূতি আনিয়া দিয়াছে। * * * আমি জানি একটি কিশোর মনে “ভারতী”র এই সঙ্ঘ কি সুন্দর পরিকল্পনার

২১০