পাতা:ঔপনিষদ ব্রহ্ম - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৪
ঔপনিষদ ব্রহ্ম।

 কর্ম্ম সাধনাই একমাত্র সাধনা। সংসারের উপযোগিতা সংসারের তাৎপর্য্যই তাই। মঙ্গলকর্ম্ম সাধনেই আমাদের স্বার্থ প্রবৃত্তি সকল ক্ষয় হইয়া আমাদের লোভ মোহ আমাদের হৃদগত বন্ধন সকলের মোচন হইয়া থাকে—আমাদের যে রিপু সকল মৃত্যুর মধ্যে আমাদিগকে জড়িত করিয়া রাখে সেই মৃত্যুপাশ অবিশ্রাম মঙ্গল কর্ম্মের সংঘর্ষেই ছিন্ন হইয়া যায়। কর্ত্তব্য কর্ম্মের সাধনাই স্বার্থপাশ হইতে মুক্তির সাধনা,—এবং ত্বয়ি নান্যথেতোঽস্তি ন কর্ম্ম লিপ্যতে নরে— ইহার আর অন্যথা নাই—কর্ম্মে লিপ্ত হইবে না এমন পথ নাই।

বিদ্যাঞ্চাবিদ্যাঞ্চ যস্তত্বেদোভয়ং সহ
অবিদ্যয়া মৃত্যুং তীর্ত্বা বিদ্যয়ামৃতমশ্নুতে।

 বিদ্যা এবং অবিদ্যা উভয়কে যিনি একত্র করিয়া জানেন তিনি অবিদ্যা অর্থাৎ কর্ম্ম দ্বারা মৃত্যু হইতে উত্তীর্ণ হইয়া ব্রহ্মলাভের দ্বারা অমৃত প্রাপ্ত হন।

 ইহাই সংসারধর্ম্মের মূলমন্ত্র—কর্ম্ম এবং ব্রহ্ম, জীবনে উভয়ের সামঞ্জস্য সাধন। কর্ম্মের দ্বারা আমরা ব্রহ্মের অভ্রভেদী মন্দির নির্ম্মাণ করিতে থাকিব, ব্রহ্ম সেই মন্দির পরিপূর্ণ করিয়া বিরাজ করিতে থাকিবেন। নহিলে কিসের জন্য আমরা ইন্দ্রিয়গ্রাম পাইয়াছি, কেন এই পেশী, এই স্নায়ু, এই বাহুবল, এই বুদ্ধিবৃত্তি, কেন এই স্নেছপ্রেম দয়া, কেন এই বিচিত্র সংসার? ইহার কি কোন অর্থ নাই? ইহা কি